আজ দু’দিন ধরেই ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের হেড লাইনে পূর্বধলার সবচাইতে আলোচিত/সমালোচিত বিষয় হচ্ছে নেত্রকোনা ৫ আসনের সংসদ সদস্য অপহরণের খবর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও বিভিন্ন জনের আইডি থেকে যে,যেমন করে পারছে তেমনি করে একটি হেডলাইন লিখে নিউজটি শেয়ার করে দিচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নানান রকমের মুখরোচক কমেন্টস।
অনেক দিনের আতংক,ভয়ভীতি,আর বিভীষিকাময় একটি পরিস্থিতি পেরিয়ে প্রকৃতি নিজেই আজ মানুষকে কতটা নির্ঝাস ঝলমলে আলোকিত সত্য প্রকাশে একেবারেই কার্পন্য করেনি। খবরের হেডলাইনই তার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। বেশ কিছুদিন ধরেই স্থানীয় সাংসদকে নিয়ে যে ঝল্পনা/কল্পনা চলে আসছিলো আজ সেটির অবসান ঘটিয়ে সঠিক সূত্রের মাধ্যমে যথাযথ প্রকাশটি আইনি প্রক্রিয়ায় যবনিকাপাত ঘটলো।একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একজন মুসলমান শরীয়ত মোতাবেক সামর্থ্য অনুযায়ী চারটি বিবাহ করতে পারেন। সেদিক থেকে সাংসদ মহোদয়ও একাধিক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন।
এতে আইনের ব্যতয় ঘটার কথা না, কিন্ত এখানে যেটি হয়েছে তাহলো ১ম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে তিনি সেটি করেছেন। যা তার পদমর্যাদাকে যেমন ক্ষুন্ন করেছে তেমনি ক্ষুন্ন করেছে ঐতিহ্যবাহী সংগঠন আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যকেও। যদিও বিষয়টি সামাজিক তারপরও একজন সাংসদ সর্বক্ষেত্রেই সাংসদের সুবিধা গ্রহন করে থাকেন। ফলে রাজনীতির কাছে সমাজিকরীতি অদৃশ্যই হয়ে গেলো।
যে কারনে বৈবাহিক বিষয়টিকে প্রাধান্য না দিয়ে পত্রিকা গুলোও “সাংসদ অপহরণ” সংবাদটিকেই শিরোনাম হিসাবে বেচে নিলো । বিগত ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে দুর্দান্ত প্রতাপশালী মানুষটির আধা ডজন খানেক ঘটনার মুখরোচক গল্পের কথা নিশ্চয়ই তার স্বজনদের অজানা থাকার কথা নয়। তাহলে আজ কেন মামলা পর্যন্ত গড়ালো ? সম্ভবত অস্তিত্ব রক্ষায় এটির প্রয়োজনীয়তা ছিল অপরিহার্য। আর তাই বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় অপহরণ শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়েছে।
যে কারনেই এজাহারটি দায়ের করা হউক না কেন একজন মহিলা/শিক্ষার্থী কতৃক “সাংসদ অপহরণ” বিষয়টি সরকার এবং দল উভয়ের জন্যই বিব্রতকর । সীমাহীন দুর্দান্ত প্রভাব আর প্রতিপত্তির ভয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার শত শত শোষিত,লাঞ্চিত,উপেক্ষিত মানুষ মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারেনি। একজন আওয়ামী লীগের সাংসদের দ্বারা আওয়ামী লীগ করার অপরাধে শত শত দলীয় কর্মীকে এতদিন নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হয়েছে যা শুধু দুঃখজনক নয় হতাশাজনকও। তারপরও ভূক্তভোগী দলীয় কর্মীরা দলের স্বার্থেই হউক অথবা ক্ষমতার ভয়েই হউক সইয়ে নিয়েছে সবটুকুই।
ক্ষমতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যে সমস্ত সুবিধাভোগী বর্ণচোরা স্বার্থপর মানুষগুলো এমপি সাহেবকে ভুলবাল বুঝিয়ে দলকে ঠকিয়েছে দলের কর্মীদেরকে এমপির কাছ থেকে দুরে সরিয়ে নিজের আখের ঘুচিয়েছে, মামলার এজাহারে তাদের নাম আংশিক আসলেও একটি বড় অংশ আভ্যন্তরীণ গ্রুপিং এর শুভাশিসে অদৃশ্যই থেকে গেলো। হয়তো প্রকৃতিই এর সুরাহা করবে। রাজনীতির নির্মমতা কতটা ভয়াবহ হলে মানুষকে এমন পরিনতির মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় সেটি যেন সকলের শিক্ষণীয় হয়ে থাকে।
একজন মানুষের আর্শীবাদ পুষ্ট হয়ে যে বা যারা বিত্তশালী হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তারাই আজ পরিস্থিতিকে উস্কে দিয়ে এমপি পরিবারকে করছে বিভ্রান্ত। সমস্ত লাঞ্চনা গঞ্চনা আর সীমাহীন অবহেলার মুখে দাড়িয়ে একজন “স্ত্রী”কে তার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হলো–থানায় এজাহার দায়ের করতে হলো। পুর্বধলার রাজনৈতিক অঙ্গনে একজন দোর্দন্ড প্রতাপশালী মানুষ আজ এজাহার মূলে অপহরণের স্বীকার। শেষ পর্যন্ত অপহরণ মামলাটিই থানায় নথিভূক্ত হলো! পুলিশ বলছে বিষয়টি “তদন্তাধীন” আশা করা যায় তদন্তের নিরপেক্ষতায় মামলাটির মোটিভ বিবেচনায় সামগ্রিক চিত্র উঠে আসবে।
সেখানে একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের অসহায়ত্বের চিত্র সহ তার পরিবারের মান সম্মানকে বিবেচনায় নিয়েই প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। প্রকৃত দোষীদের সীমাহীন দৌরাত্ম সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার জনগন নীরবে নিভৃতেই সইয়ে গেছে– কিন্তু সত্য যে দৃশ্যপটে আপনা/আপনিই ভেসে উঠলো। যেটি জনতা পারেনি সেটি পেরেছে প্রকৃতি। কি নির্মম ভাগ্যের পরিহাস !
অর্থ বিত্ত,প্রভাব-প্রতিপত্তি,আর ক্ষমতার দাম্ভিকতাকে দুমড়ে-মুচড়ে চুরমার করে দিয়ে “প্রকৃতি” আজ সমাজ এবং রাষ্ট্রকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বিচারের বাণী কখনোই নীরবে-নিভৃতে কাঁদে নাই বরং বিচারকে ন্যায়বিচারের দ্বারে পৌঁছে দিয়েছে। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র যখন অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তখন সহায়ক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় “প্রকৃতি”। যেখানে শুধুই ন্যায় বিচার প্রতিষ্টিত হয়।
লেখক : মোঃ এমদাদুল হক বাবুল
সহঃঅধ্যাপক পূর্বধলা সরকারি কলেজ ও
সভাপতি,বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন
পূর্বধলা, নেত্রকোণা।