নেত্রকোনা ০৮:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংক হিসাব খোলার প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে

  • আপডেট : ১২:৩৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৬০

আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি নির্ভর সেবায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন ব্যাংকের গ্রাহকরা, ব্যাংকগুলোও। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ ব্যাংক ব্যবস্থার বিকল্প নেই। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন, অগ্রগতির স্বার্থেই সবাই একটি শক্তিশালী ব্যাংক ব্যবস্থা প্রত্যাশা করে। দিনে দিনে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনিভাবে ব্যাংকের গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে। সারাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাংককে ঘিরেই আবর্তিত হয় সাধারণত। অটোমেশন বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে চমত্কার গতির সঞ্চার হয়েছে ব্যাংক খাতে। এখন আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং কম সময়ে লেনদেন সম্পন্ন করা যাচ্ছে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অর্থ প্রেরণে বিদ্যমান নানান জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার অবসান হয়েছে।

বর্তমানে দেশে ৪৯টি ব্যাংকের হিসাব খোলার ফরম ১০ থেকে ৩১ পাতার। এতে করে গ্রাহকরা স্বাভাবিকভাবে সমস্যায় পড়ছেন। ব্যাংকে নতুন হিসাব খুলতে গিয়ে গ্রাহকেরা হয়রানি হন ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর আগে অনেকবার ব্যাংকগুলোকে হিসাব খোলার ফরম ও গ্রাহক সম্পর্কিত তথ্য (কেওয়াইসি) সংক্রান্ত ফরমের বিষয়ে নির্দেশনা দিলেও এখন পর্যন্ত সব ব্যাংক এ নির্দেশনা মেনে ফরম তৈরি করতে পারেনি। এত নির্দেশনা জারির পরও বেশির ভাগ ব্যাংক বড়ো আকারের ফরম রেখে দিয়েছে। দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৪৯টিই হিসাব খোলার ফরমের সঙ্গে নানা রকম ফরম ও নিয়মাবলী গ্রাহককে ধরিয়ে দেন। এর ফলে একদিকে ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয় বাড়ে আবার গ্রাহকও ব্যাংকে হিসাব খুলতে এসে নানা বিড়ম্বনা ও হয়রানির মধ্যে পড়ে যান। এখনো বেশির ভাগ ব্যাংক কেওয়াইসি ফরম পূরণের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি অনেক অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছে।

বর্তমানে ব্যাংক হিসাব খুলতে বাধ্যতামূলক নো ইয়্যুর কাস্টমার (কেওয়াইসি) ফরম পূরণ বা গ্রাহকের বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হয়। ব্যাংক ভেদে এই ফরমে ৫০ থেকে ৭০টি প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। এতে গ্রাহকের ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের যাচাই-বাছাই শেষে বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর চালু হয় হিসাব। এ অবস্থা দূরীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ গ্রাহক হয়রানি বন্ধ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি নীতিমালা জারি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ধারী যে কেউ সহজেই ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারবেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খুব সহজেই ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা রয়েছে। পরিচয়পত্র থাকলে আর অন্য কিছু লাগে না। আগামী ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি বা ই-কেওয়াইসি চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংকগুলো তাদের শাখা, এজেন্ট ও বুথগুলোতে হিসাব খুলতে এই সুবিধা পাবে। এরই মধ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ৩৩ জেলার ৫০ এলাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে ই-কেওয়াইসি ব্যবহূত হয়েছে। বর্তমান আমাদের আশেপাশে কয়েকটি দেশে যেমন—ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে ডিজিটাল এ সেবা। গত ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংক ই-কেওয়াইসি বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করে। মূলত সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির আর্থিকভাতা প্রদানের জন্য হিসাব খুলতে ই-কেওয়াইসির বিষয়টি সামনে আসে।

ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে ই-কেওয়াইসি চালু হওয়ার ফলে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সহজেই ব্যাংকিং সেবার আওতায় চলে আসবে। ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচির ভাতা সরাসরি সুবিধাভোগীদের হাতে নগদ দেওয়ার বদলে ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থ বছরে (২০১৯-২০) এখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। আগে থেকে এ কর্মসূচির সুবিধাভোগী ছিল প্রায় ৭৬ লাখ মানুষ। এবার তা বেড়ে হবে ৮৯ লাখ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি।
জনপ্রিয়

পূর্বধলায় বণিক সমিতির সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতবিনিময়

ব্যাংক হিসাব খোলার প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে

আপডেট : ১২:৩৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯

আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযুক্তি নির্ভর সেবায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন ব্যাংকের গ্রাহকরা, ব্যাংকগুলোও। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ ব্যাংক ব্যবস্থার বিকল্প নেই। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়ন, অগ্রগতির স্বার্থেই সবাই একটি শক্তিশালী ব্যাংক ব্যবস্থা প্রত্যাশা করে। দিনে দিনে দেশে ব্যাংকের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনিভাবে ব্যাংকের গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়েছে। সারাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাংককে ঘিরেই আবর্তিত হয় সাধারণত। অটোমেশন বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে চমত্কার গতির সঞ্চার হয়েছে ব্যাংক খাতে। এখন আগের চেয়ে অনেক দ্রুত এবং কম সময়ে লেনদেন সম্পন্ন করা যাচ্ছে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় অর্থ প্রেরণে বিদ্যমান নানান জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতার অবসান হয়েছে।

বর্তমানে দেশে ৪৯টি ব্যাংকের হিসাব খোলার ফরম ১০ থেকে ৩১ পাতার। এতে করে গ্রাহকরা স্বাভাবিকভাবে সমস্যায় পড়ছেন। ব্যাংকে নতুন হিসাব খুলতে গিয়ে গ্রাহকেরা হয়রানি হন ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর আগে অনেকবার ব্যাংকগুলোকে হিসাব খোলার ফরম ও গ্রাহক সম্পর্কিত তথ্য (কেওয়াইসি) সংক্রান্ত ফরমের বিষয়ে নির্দেশনা দিলেও এখন পর্যন্ত সব ব্যাংক এ নির্দেশনা মেনে ফরম তৈরি করতে পারেনি। এত নির্দেশনা জারির পরও বেশির ভাগ ব্যাংক বড়ো আকারের ফরম রেখে দিয়েছে। দেশের ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৪৯টিই হিসাব খোলার ফরমের সঙ্গে নানা রকম ফরম ও নিয়মাবলী গ্রাহককে ধরিয়ে দেন। এর ফলে একদিকে ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয় বাড়ে আবার গ্রাহকও ব্যাংকে হিসাব খুলতে এসে নানা বিড়ম্বনা ও হয়রানির মধ্যে পড়ে যান। এখনো বেশির ভাগ ব্যাংক কেওয়াইসি ফরম পূরণের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি অনেক অপ্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করছে।

বর্তমানে ব্যাংক হিসাব খুলতে বাধ্যতামূলক নো ইয়্যুর কাস্টমার (কেওয়াইসি) ফরম পূরণ বা গ্রাহকের বিস্তারিত তথ্য জমা দিতে হয়। ব্যাংক ভেদে এই ফরমে ৫০ থেকে ৭০টি প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। এতে গ্রাহকের ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের যাচাই-বাছাই শেষে বেশ কয়েকদিন পেরিয়ে যাওয়ার পর চালু হয় হিসাব। এ অবস্থা দূরীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ গ্রাহক হয়রানি বন্ধ ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি নীতিমালা জারি করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ধারী যে কেউ সহজেই ব্যাংকে হিসাব খুলতে পারবেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে খুব সহজেই ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা রয়েছে। পরিচয়পত্র থাকলে আর অন্য কিছু লাগে না। আগামী ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ইলেকট্রনিক কেওয়াইসি বা ই-কেওয়াইসি চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ব্যাংকগুলো তাদের শাখা, এজেন্ট ও বুথগুলোতে হিসাব খুলতে এই সুবিধা পাবে। এরই মধ্যে পাইলট প্রকল্প হিসেবে দেশের ৩৩ জেলার ৫০ এলাকায় ব্যাংক হিসাব খুলতে ই-কেওয়াইসি ব্যবহূত হয়েছে। বর্তমান আমাদের আশেপাশে কয়েকটি দেশে যেমন—ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে ডিজিটাল এ সেবা। গত ২০১৬ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ব্যাংক ই-কেওয়াইসি বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করে। মূলত সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির আর্থিকভাতা প্রদানের জন্য হিসাব খুলতে ই-কেওয়াইসির বিষয়টি সামনে আসে।

ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে ই-কেওয়াইসি চালু হওয়ার ফলে দেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সহজেই ব্যাংকিং সেবার আওতায় চলে আসবে। ফলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন কর্মসূচির ভাতা সরাসরি সুবিধাভোগীদের হাতে নগদ দেওয়ার বদলে ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থ বছরে (২০১৯-২০) এখাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৪ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। আগে থেকে এ কর্মসূচির সুবিধাভোগী ছিল প্রায় ৭৬ লাখ মানুষ। এবার তা বেড়ে হবে ৮৯ লাখ।