নেত্রকোনা ০৩:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জুড়ীতে টিলায় টিলায় অমূল্য রত্ন

  • আপডেট : ০৯:১২:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯
  • ২০০

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার চা অধ্যুষিত এই জেলার চারিদিকে সবুজের অরণ্য আর উচুঁ নিচু পাহাড়। পাহাড়ের মধ্যে সারি সারি কমলা গাছ। গাছে গাছে কমলায় টই টম্ভুর। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার টিলায় টিলায় এই অমূল্য রত্ন কমলা। কমলার মৌসুম সবে মাত্র শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই কমলা চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। কারণ কমলার ফলন ভালো হয়েছে। তবে কমলা চাষীরা বলছেন ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কমলা ও আনারস চাষ উন্নয়ন প্রকল্প’ চালু ছিলো। প্রকল্পের সময় প্রশিক্ষণ ও তাৎক্ষণিক পরামর্শে কমলাচাষিরা উপকৃত হতেন। বর্তমানে এই প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। সেই প্রকল্প আবার চালুর দাবি তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় কমলা বাগানের সংখ্যা ১৪৬টি। জেলা জুড়ে ১৭৮ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। তার মধ্যে জুড়ী উপজেলায় ৯২ হেক্টর, বড়লেখায় ৬০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ২০ হেক্টর জমিতে এই কমলা চাষ। এর মধ্যে কমলা চাষী রয়েছেন ১৪৬ জন। গত বছর প্রতি হেক্টরে কমলার উৎপাদন ছিল চার থেকে সাড়ে চার টন। এবছর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ৬ মেট্টিক টন।

চাষীদের অভিযোগ মৌসুমের শুরুতে ভারতীয় কমলা বাজারে চলে আসায় তাদের লোকসান পোহাতে হয়। বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তারা অবহিত করেছেন।
জুড়ী উপজেলার লালছড়া চা বাগানের জয়নুল ইসলাম জানান, তার বাগানে প্রায় ১২০০ কমলা গাছ রয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর তার বাগানে কমলার ফলন ভালো হয়েছে। এবছর প্রায় ২লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রির আশা করছেন। তবে ভারতীয় কমলা আমদানির কারণে সঠিক মুল্য পাচ্ছেন না তারা। ভারতীয় কমলা আমদানি বন্ধ করার দাবিও জানান তিনি।

জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের রূপাছড়া, লালছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়াসহ পাহাড়ি এলাকার কমলা চাষিরা জানান, গাছে গাছে সবুজ সোনালি ফল ঝুলে আছে। গাছভর্তি ফলন না হলেও কোনও গাছই খালি নেই, কমবেশি সব গাছেই রয়েছে ফল। বানরের উৎপাতে কমলা ঝরছে।

জুড়ীতে দুই ধরণের কমলার চাষ বেশী হয়। এর মধ্যে নাগপুরী ও খাসি। তবে খাসি কমলার চাষ এখানে বেশী।

কমলা চাষিরা জানান, তারা স্থানীয়ভাবে পাইকারের কাছে ১০০ কমলা ৫০০ টাকা থেকে ১৫শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমের শুরুতে ভারতীয় কমলা বাজারে চলে আসায় অনেক চাষী আগাম কমলা বাজারে তুলেন। যার জন্য কমলা টক হয়। বিষয়টি মাথায় রেখে কিভাবে আগাম কমলা চাষ করা যায় সেটি দেখা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, আগে চাষীরা বাগান বিক্রি করে দিত পাইকারের কাছে। যার ফলে চাষী ও পাইকার সঠিকভাবে বাগানের পরিচর্চা করত না। আমরা চাষীদের বিষয়টি বুঝিয়েছি যে এভাবে বাগান বিক্রি করে দিলে তাদের লোকসান হবে। আমরা তাদেরকে ল্যাপটপ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যাতে কমলার ফলন বাড়ানো যায়। কমলার উৎপাদন নিশ্চিত করতে বর্ষার পর পর গাছের ডাল ছাঁটাই এবং খরার সময় সেচ দেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যে প্রকল্পটি চালু ছিল সেটি শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণে ৫ (২০১৯-২০২৪ ) বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প চালু হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি।

পূর্বধলায় উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন চেয়ারম্যান প্রার্থী

জুড়ীতে টিলায় টিলায় অমূল্য রত্ন

আপডেট : ০৯:১২:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০১৯

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার চা অধ্যুষিত এই জেলার চারিদিকে সবুজের অরণ্য আর উচুঁ নিচু পাহাড়। পাহাড়ের মধ্যে সারি সারি কমলা গাছ। গাছে গাছে কমলায় টই টম্ভুর। মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার টিলায় টিলায় এই অমূল্য রত্ন কমলা। কমলার মৌসুম সবে মাত্র শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই কমলা চাষীদের মুখে হাসি ফুটেছে। কারণ কমলার ফলন ভালো হয়েছে। তবে কমলা চাষীরা বলছেন ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কমলা ও আনারস চাষ উন্নয়ন প্রকল্প’ চালু ছিলো। প্রকল্পের সময় প্রশিক্ষণ ও তাৎক্ষণিক পরামর্শে কমলাচাষিরা উপকৃত হতেন। বর্তমানে এই প্রকল্পটি বন্ধ রয়েছে। সেই প্রকল্প আবার চালুর দাবি তাদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় কমলা বাগানের সংখ্যা ১৪৬টি। জেলা জুড়ে ১৭৮ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। তার মধ্যে জুড়ী উপজেলায় ৯২ হেক্টর, বড়লেখায় ৬০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ২০ হেক্টর জমিতে এই কমলা চাষ। এর মধ্যে কমলা চাষী রয়েছেন ১৪৬ জন। গত বছর প্রতি হেক্টরে কমলার উৎপাদন ছিল চার থেকে সাড়ে চার টন। এবছর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ৬ মেট্টিক টন।

চাষীদের অভিযোগ মৌসুমের শুরুতে ভারতীয় কমলা বাজারে চলে আসায় তাদের লোকসান পোহাতে হয়। বিষয়টি একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তারা অবহিত করেছেন।
জুড়ী উপজেলার লালছড়া চা বাগানের জয়নুল ইসলাম জানান, তার বাগানে প্রায় ১২০০ কমলা গাছ রয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর তার বাগানে কমলার ফলন ভালো হয়েছে। এবছর প্রায় ২লাখ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন। ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রির আশা করছেন। তবে ভারতীয় কমলা আমদানির কারণে সঠিক মুল্য পাচ্ছেন না তারা। ভারতীয় কমলা আমদানি বন্ধ করার দাবিও জানান তিনি।

জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের রূপাছড়া, লালছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়াসহ পাহাড়ি এলাকার কমলা চাষিরা জানান, গাছে গাছে সবুজ সোনালি ফল ঝুলে আছে। গাছভর্তি ফলন না হলেও কোনও গাছই খালি নেই, কমবেশি সব গাছেই রয়েছে ফল। বানরের উৎপাতে কমলা ঝরছে।

জুড়ীতে দুই ধরণের কমলার চাষ বেশী হয়। এর মধ্যে নাগপুরী ও খাসি। তবে খাসি কমলার চাষ এখানে বেশী।

কমলা চাষিরা জানান, তারা স্থানীয়ভাবে পাইকারের কাছে ১০০ কমলা ৫০০ টাকা থেকে ১৫শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমের শুরুতে ভারতীয় কমলা বাজারে চলে আসায় অনেক চাষী আগাম কমলা বাজারে তুলেন। যার জন্য কমলা টক হয়। বিষয়টি মাথায় রেখে কিভাবে আগাম কমলা চাষ করা যায় সেটি দেখা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, আগে চাষীরা বাগান বিক্রি করে দিত পাইকারের কাছে। যার ফলে চাষী ও পাইকার সঠিকভাবে বাগানের পরিচর্চা করত না। আমরা চাষীদের বিষয়টি বুঝিয়েছি যে এভাবে বাগান বিক্রি করে দিলে তাদের লোকসান হবে। আমরা তাদেরকে ল্যাপটপ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। যাতে কমলার ফলন বাড়ানো যায়। কমলার উৎপাদন নিশ্চিত করতে বর্ষার পর পর গাছের ডাল ছাঁটাই এবং খরার সময় সেচ দেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যে প্রকল্পটি চালু ছিল সেটি শেষ হয়ে গেছে। নতুন করে লেবু জাতীয় ফসলের সম্প্রসারণে ৫ (২০১৯-২০২৪ ) বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প চালু হবে।