নেত্রকোনা ০৮:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীমঙ্গলে বারি মাল্টা-১ চাষে সাফল্য

  • আপডেট : ০৮:১৬:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯
  • ২২৭

শ্রীমঙ্গল(মৌলভীবাজার)ঃ
শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো মাল্টা চাষে সফলতা এসেছে। দু’ বছরের মাথায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪৮টি বারি মাল্টা-১ এর প্রদর্শনী প্লটে শতকরা ৬০ শতাংশ গাছে ফল ধরেছে। তৃতীয় বছরে অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে শতভাগ গাছে মাল্টা ফল ধরবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
শ্রীমঙ্গল কৃষি অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ২০০৩ সালে বারি মাল্টা-১ নামে মাল্টার এই উন্নতজাত উদ্ভাবন করে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে মাল্টার সফল চাষ হয়েছে। কোথাও কোথাও বাম্পার ফলনও হয়েছে মাল্টার।
মোনালিসা সুইটি বলেন, এটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। ফল গোলাকার ও পাকা ফলের রঙ সবুজ। খুবই রসালো, খেতে মিষ্টি ও সু-স্বাদু। গাছ প্রতি ৩০০-৪০০টি ফল ধরে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২০ টন। বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, নরসিংদি ও খাগড়াছড়ি সহ দেশের অন্য সব অঞ্চল চাষের জন্য এই মাল্টা উপযোগি।
মোনালিসা সুইটি আরও বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের ‘সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের’ আওতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো মাল্টা চাষের উদ্দ্যোগ গ্রহন করা হয়। সেমতে, মাল্টা চাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে চারা, সার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় এবং উপজেলার সিন্দুরখান, কালাপুর, ভূনবীর, মাজডিহি, ডলুছড়া, দিলবরনগর, আশিদ্রোন, গন্ধর্ব্বপুর ও মির্জাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এক বিঘা করে ৪৮টি মাল্টার প্রদর্শনী প্লট তৈরী করা হয়। দু’বছরের মাথায় এসব প্রদর্শনী প্লটের ৬০ শতাংশ গাছে ফল ধরেছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এসব প্লটে শতভাগ গাছে ফল ধরবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের গন্ধর্ব্বপুর গ্রামের সফল চাষী মোঃ তাহির মিয়া জানান, তিনি দু’বছর আগে ২ বিঘা জমিতে দুইটি বারি মাল্টা-১ এর প্রদর্শনী প্লট করেন। ২টি প্লটে তিনি ৮০টি করে ১৬০টি মাল্টার চারা রোপন করেন। দু’বছরে সার, গোবর, কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার ইত্যাদি বাবদ তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, দু’বছরের মাথায় এখন তার প্লটে ১৬০টি গাছেই ফল ধরেছে। তিনি মাল্টা চাষ করে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্ম্মা জানান, শ্রীমঙ্গলের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগি। তাছাড়া দেশের পাহাড়ি এলাকায় বারি মাল্টা-১ চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। পাহাড়ি ঢালু জমিতে মাল্টা চাষ ভালো হয়ে থাকে। এসব বিবেচনা শ্রীমঙ্গলসহ বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় মাল্টা চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমার পাল জানান, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ মাল্টা একটি সু-স্বাদু ফল। সাইট্রাস ফলের মধ্যে এটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। মাল্টা চাষিরা যদি নিয়মিত পরিচর্যা, আগাছা দমন, সেচ ও কীটনাশক স্প্রে করেন এবং যতœবান হন তবে সামান্য খরচে প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত মাল্টা বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হতে পারেন।

তিনি বলেন, প্রতি বিঘাতে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করতে পারেন। অজিত পাল আরও বলেন, স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রদর্শনী প্লটগুলো নিয়মিত পরিদর্শন ও দেখভাল করছেন এবং চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এসব প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। আমাদের প্রকাশনা “পূর্বকন্ঠ” স্বাধীনতার চেতনায় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় অনলাইন । পাঠক আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা। পূর্বকণ্ঠ কথা বলে বাঙালির আত্মপ্রত্যয়ী আহ্বান ও ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার। কথা বলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে। ছড়িয়ে দিতে এ চেতনা দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে। আমরা রাষ্ট্রের আইন কানুন, রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী এবং বাঙ্গালীর আবহমান কালের সামাজিক সহনশীলতার বিপক্ষে পূর্বকন্ঠ কখনো সংবাদ প্রকাশ করে না। আমরা সকল ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন ধর্মমত বা তাদের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আমরা কিছু প্রকাশ করি না। আমাদের সকল প্রচেষ্টা পাঠকের সংবাদ চাহিদাকে কেন্দ্র করে। তাই পাঠকের যে কোনো মতামত আমরা সাদরে গ্রহন করব।
জনপ্রিয়

পূর্বধলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের দাফন সম্পন্ন

শ্রীমঙ্গলে বারি মাল্টা-১ চাষে সাফল্য

আপডেট : ০৮:১৬:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৯

শ্রীমঙ্গল(মৌলভীবাজার)ঃ
শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো মাল্টা চাষে সফলতা এসেছে। দু’ বছরের মাথায় শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৪৮টি বারি মাল্টা-১ এর প্রদর্শনী প্লটে শতকরা ৬০ শতাংশ গাছে ফল ধরেছে। তৃতীয় বছরে অর্থাৎ আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে শতভাগ গাছে মাল্টা ফল ধরবে বলে আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
শ্রীমঙ্গল কৃষি অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি জানান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট ২০০৩ সালে বারি মাল্টা-১ নামে মাল্টার এই উন্নতজাত উদ্ভাবন করে। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে মাল্টার সফল চাষ হয়েছে। কোথাও কোথাও বাম্পার ফলনও হয়েছে মাল্টার।
মোনালিসা সুইটি বলেন, এটি নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত। ফল গোলাকার ও পাকা ফলের রঙ সবুজ। খুবই রসালো, খেতে মিষ্টি ও সু-স্বাদু। গাছ প্রতি ৩০০-৪০০টি ফল ধরে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন ২০ টন। বৃহত্তর সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়, নরসিংদি ও খাগড়াছড়ি সহ দেশের অন্য সব অঞ্চল চাষের জন্য এই মাল্টা উপযোগি।
মোনালিসা সুইটি আরও বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের ‘সাইট্রাস ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের’ আওতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে শ্রীমঙ্গলে প্রথমবারের মতো মাল্টা চাষের উদ্দ্যোগ গ্রহন করা হয়। সেমতে, মাল্টা চাষিদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে চারা, সার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় এবং উপজেলার সিন্দুরখান, কালাপুর, ভূনবীর, মাজডিহি, ডলুছড়া, দিলবরনগর, আশিদ্রোন, গন্ধর্ব্বপুর ও মির্জাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এক বিঘা করে ৪৮টি মাল্টার প্রদর্শনী প্লট তৈরী করা হয়। দু’বছরের মাথায় এসব প্রদর্শনী প্লটের ৬০ শতাংশ গাছে ফল ধরেছে। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এসব প্লটে শতভাগ গাছে ফল ধরবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের গন্ধর্ব্বপুর গ্রামের সফল চাষী মোঃ তাহির মিয়া জানান, তিনি দু’বছর আগে ২ বিঘা জমিতে দুইটি বারি মাল্টা-১ এর প্রদর্শনী প্লট করেন। ২টি প্লটে তিনি ৮০টি করে ১৬০টি মাল্টার চারা রোপন করেন। দু’বছরে সার, গোবর, কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার ইত্যাদি বাবদ তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, দু’বছরের মাথায় এখন তার প্লটে ১৬০টি গাছেই ফল ধরেছে। তিনি মাল্টা চাষ করে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা রকেন্দ্র শর্ম্মা জানান, শ্রীমঙ্গলের মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য খুবই উপযোগি। তাছাড়া দেশের পাহাড়ি এলাকায় বারি মাল্টা-১ চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত। পাহাড়ি ঢালু জমিতে মাল্টা চাষ ভালো হয়ে থাকে। এসব বিবেচনা শ্রীমঙ্গলসহ বৃহত্তর সিলেটের পাহাড়ি এলাকায় মাল্টা চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অজিত কুমার পাল জানান, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ মাল্টা একটি সু-স্বাদু ফল। সাইট্রাস ফলের মধ্যে এটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল। মাল্টা চাষিরা যদি নিয়মিত পরিচর্যা, আগাছা দমন, সেচ ও কীটনাশক স্প্রে করেন এবং যতœবান হন তবে সামান্য খরচে প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত মাল্টা বিক্রি করে প্রচুর লাভবান হতে পারেন।

তিনি বলেন, প্রতি বিঘাতে ২০-২৫ হাজার টাকা খরচ করে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করতে পারেন। অজিত পাল আরও বলেন, স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রদর্শনী প্লটগুলো নিয়মিত পরিদর্শন ও দেখভাল করছেন এবং চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এসব প্রদর্শনী প্লট পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।