নেত্রকোনা ১০:০৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শালিক পাখির অভয় আশ্রম কুষ্টিয়ার মিরপুর

শালিক পাখির অভয় আশ্রম কুষ্টিয়ার মিরপুর। ভোরের আলো ফুটতেই মিরপুর বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে নামে শালিক পাখির দল। কিঁচির মিচির শব্দে মাতিয়ে তোলে পুরো শহর। খাবারের সন্ধনে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে মিরপুর বাজার ও এর নিকটবর্তী বাগানগুলোতে।

শালিক মুলত বেশ কয়েক ধরনের হয়। সাদা-কালো শালিককে ডাকা হয় গো-শালিক বা গোবরে-শালিক নামে। এদের ঠোঁটের রং গাড় কমলা-হলুদ এবং চোখের মণি হালকা হলুদ রঙের। অন্যদিকে ঝুঁটি-শালিকও সাদা-কালো রঙের হয় কিন্তু এর মাথায় একটি ঝুঁটি রয়েছে।

গাড় বাদামি শালিককে বলা হয় ভাত শালিক। এদের ঠোঁট ও পা উজ্জ্বল হলুদ রঙের। এর বাইরেও রয়েছে গাঙশালিক, বামন শালিক প্রভৃতি। শালিকের স্বরতন্ত্রী বেশ জটিল হওয়ায় এদের ডাক বিচিত্র ও বিভিন্ন স্বরে ওঠানামা করে। এরা খুব সহজেই আশেপাশের আওয়াজ আর মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে। এরা মানুষের গলার স্বর শুনে নির্দিষ্ট কাউকে চিনতে সক্ষম। প্রায় সব প্রজাতির শালিকই বিভিন্ন স্বরে ডাকতে পারে এবং অন্য শালিকের কণ্ঠ নকল করতে পারে। সামাজিক পাখি হিসেবে শালিকের সুনাম রয়েছে। এরা দলবেঁধে ডাকে ও ঝগড়াঝাঁটিও করে অকে অপরের সাথে।

সাধারণত শালিকের বাসা বাঁধতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাতদিন। তবে গো-শালিক প্রায় দশ থেকে পনেরোদিন সময় নেয়। শালিক একবারে ৩ থেকে ৭টি ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটতে বাচ্চা মালিক জন্ম নিতে সময় লাগে ১৫থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। বাচ্চা শালিকগুলো সাধারণত ১৯ থেকে ২৭ দিন পর্যন্ত সময় নেয় উড়তে শেখার জন্য।

স্থানীয় মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী কলেজের সাবেক অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন পÐিত জানান, মিরপুরে বেশ কয়েক প্রজাতিন শালিক দেখা যায়। তবে এ সময়টায় মুলত ভাত শালিক বেশি দেখা যয়। এটি স্থানীয় বাজারে খাবারের সন্ধানে দিনের বেশির ভাগ সময় থাকে। এছাড়াও আশেপাশের ফলজ বাগান ও মাঠেও এদের দেখা যায়।

স্থানীয় মিরপুর বাজারের চা বিক্রেতা ইসা হক জানান, বেশ কয়েক বছর মিরপুর বাজারে শালিক পাখি খাবারের জন্য আসে। তবে শীতের সময় এদের বেশি দেখা যায়। প্রায় পুরো শীত জুড়েই এসব পাখি এখানে থাকে। এসব পাখিদের স্থানীয়রা বিভিন্ন খাবার দেয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিরা বিভিন্ন দোকানের সামনে খাবারের জন্য থাকে। মুলত মাঠে খারারের উৎস কমে গেলে পাখিরা তখন এসব এলাকায় আসে।

অন্যান্য সময় যখন মাঠে ধান, গম, পোকামাকড় ইত্যাদি খাবার থাকে তখন এদিকে পাখিও কম আসে।
স্থানীয় বাজারের হোটেল কর্মচারী রমেন কুমার পাল জানান, প্রতিদিন আমাদের হোটেলের বাসি খাবার পাখিদের দেয়া হয়। সকালের বাসি সিঙাড়া, জিলিপিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার পাখিরা খাই। এ ছাড়াও অনেকে পাউরুটি, বিস্কুট, চানাচুর খেতে দেয়।

স্থানীয় রফিক কসমেটিকের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, শালিকের বিষ্ঠায় আমাদের পরিবেশ অনেক নোংড়া হয়ে যায়। এর পরেও আমরা পাখিদের কোন ক্ষতি করি না। এসব পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এরা আমাদের সম্পদ। তাই পাখি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি।

পূর্বধলায় নিজ মেয়েকে হত্যা করে শেষ রক্ষা হলো না মায়ের

শালিক পাখির অভয় আশ্রম কুষ্টিয়ার মিরপুর

আপডেট : ০৪:০৯:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২০

শালিক পাখির অভয় আশ্রম কুষ্টিয়ার মিরপুর। ভোরের আলো ফুটতেই মিরপুর বাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে নামে শালিক পাখির দল। কিঁচির মিচির শব্দে মাতিয়ে তোলে পুরো শহর। খাবারের সন্ধনে দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে মিরপুর বাজার ও এর নিকটবর্তী বাগানগুলোতে।

শালিক মুলত বেশ কয়েক ধরনের হয়। সাদা-কালো শালিককে ডাকা হয় গো-শালিক বা গোবরে-শালিক নামে। এদের ঠোঁটের রং গাড় কমলা-হলুদ এবং চোখের মণি হালকা হলুদ রঙের। অন্যদিকে ঝুঁটি-শালিকও সাদা-কালো রঙের হয় কিন্তু এর মাথায় একটি ঝুঁটি রয়েছে।

গাড় বাদামি শালিককে বলা হয় ভাত শালিক। এদের ঠোঁট ও পা উজ্জ্বল হলুদ রঙের। এর বাইরেও রয়েছে গাঙশালিক, বামন শালিক প্রভৃতি। শালিকের স্বরতন্ত্রী বেশ জটিল হওয়ায় এদের ডাক বিচিত্র ও বিভিন্ন স্বরে ওঠানামা করে। এরা খুব সহজেই আশেপাশের আওয়াজ আর মানুষের কথা অনুকরণ করতে পারে। এরা মানুষের গলার স্বর শুনে নির্দিষ্ট কাউকে চিনতে সক্ষম। প্রায় সব প্রজাতির শালিকই বিভিন্ন স্বরে ডাকতে পারে এবং অন্য শালিকের কণ্ঠ নকল করতে পারে। সামাজিক পাখি হিসেবে শালিকের সুনাম রয়েছে। এরা দলবেঁধে ডাকে ও ঝগড়াঝাঁটিও করে অকে অপরের সাথে।

সাধারণত শালিকের বাসা বাঁধতে সময় লাগে পাঁচ থেকে সাতদিন। তবে গো-শালিক প্রায় দশ থেকে পনেরোদিন সময় নেয়। শালিক একবারে ৩ থেকে ৭টি ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটতে বাচ্চা মালিক জন্ম নিতে সময় লাগে ১৫থেকে ২১ দিন পর্যন্ত। বাচ্চা শালিকগুলো সাধারণত ১৯ থেকে ২৭ দিন পর্যন্ত সময় নেয় উড়তে শেখার জন্য।

স্থানীয় মিরপুর মাহমুদা চৌধুরী কলেজের সাবেক অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন পÐিত জানান, মিরপুরে বেশ কয়েক প্রজাতিন শালিক দেখা যায়। তবে এ সময়টায় মুলত ভাত শালিক বেশি দেখা যয়। এটি স্থানীয় বাজারে খাবারের সন্ধানে দিনের বেশির ভাগ সময় থাকে। এছাড়াও আশেপাশের ফলজ বাগান ও মাঠেও এদের দেখা যায়।

স্থানীয় মিরপুর বাজারের চা বিক্রেতা ইসা হক জানান, বেশ কয়েক বছর মিরপুর বাজারে শালিক পাখি খাবারের জন্য আসে। তবে শীতের সময় এদের বেশি দেখা যায়। প্রায় পুরো শীত জুড়েই এসব পাখি এখানে থাকে। এসব পাখিদের স্থানীয়রা বিভিন্ন খাবার দেয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিরা বিভিন্ন দোকানের সামনে খাবারের জন্য থাকে। মুলত মাঠে খারারের উৎস কমে গেলে পাখিরা তখন এসব এলাকায় আসে।

অন্যান্য সময় যখন মাঠে ধান, গম, পোকামাকড় ইত্যাদি খাবার থাকে তখন এদিকে পাখিও কম আসে।
স্থানীয় বাজারের হোটেল কর্মচারী রমেন কুমার পাল জানান, প্রতিদিন আমাদের হোটেলের বাসি খাবার পাখিদের দেয়া হয়। সকালের বাসি সিঙাড়া, জিলিপিসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার পাখিরা খাই। এ ছাড়াও অনেকে পাউরুটি, বিস্কুট, চানাচুর খেতে দেয়।

স্থানীয় রফিক কসমেটিকের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, শালিকের বিষ্ঠায় আমাদের পরিবেশ অনেক নোংড়া হয়ে যায়। এর পরেও আমরা পাখিদের কোন ক্ষতি করি না। এসব পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এরা আমাদের সম্পদ। তাই পাখি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের।