নেত্রকোনা ০৯:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃক্ষপ্রেমী কুষ্টিয়ার পিয়ারুল ইসলাম

  • আপডেট : ০৪:২৯:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৯
  • ২৬৯

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া :

দেশের স্বার্থে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বৃক্ষ রোপনের ইচ্ছা পিয়ারুল ইসলামের। তার ইচ্ছা নিজের অর্থেই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বৃক্ষ রোপন করবেন তিনি। কুষ্টিয়ার ভেড়ামার উপজেলার কলেজপাড়া এলাকার মৃত আলাউদ্দিন মালিথার ছেলে কৃষক পিয়ারুল ইসলাম। স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। আয়ের উৎস বলতে কেবল নিজের দুই বিঘা জমির চাষাবাদ আর বাড়ি ভাড়া। এই দিয়ে চলে তার সংসারের খচ্চাপাতি। তবে বৃক্ষ রোপনের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। আবার নিজের টাকায় বিজ কিনে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার পাশে, ক্যানেলের ধারে এমনকি রেল লাইনের ধারে বৃক্ষ রোপন করেন পিয়ারুল ইসলাম। মুলত দেশে বজ্রপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় পিয়ারুল জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তালের বীজ রোপন করেন। এই ভালো কাজে এলাকার মানুষের মহযোগীতাও পান পিয়ারুল।

শুক্রবার সকালে সরেজমিন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুটি বস্তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫শ’ তালের বীজ নিয়ে এসেছেন সেখানে রোপন করতে। এরপর স্থানীয় এক কৃষকের সহযোগীতায় এসব তালের বীজ তিনি নিজেই রোপন করছেন।
কৃষক পিয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে তালের বীজ রোপন করছি। গত বছর প্রায় ১ হাজার তালের বীজ সংগ্রহ করে নিজেই রোপন করেছি। এ বছর ইচ্ছা আছে দুই হাজার তালের বীজ রোপন করা। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪শ’ তালবীজ রোপন করেছি। তবে মিরপুর উপজেলাই এবার প্রথম।

কৃষক পিয়ারুল ইসলাম জানান, তালের বীজ বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার পাশে, ক্যানেলের ধারে, রেল লাইনের পাশে রোপন করি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চেষ্টা করি মাঠের মধ্যে রোপন করতে। কারণ, ফাকা মাঠে বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। এতে অনেক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

তিনি আরও জানান, তাজবীজগুলো মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের থেকে সংগ্রহ করি। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফলের আড়ৎ থেকে পচা তাল সংগ্রহ করে প্রথমে তা সংরক্ষণ করি। এরপর ভাদ্র মাসের শেষ দিক থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বীজগুলো রোপন করি। এ বছর তাল বীজ সংগ্রহের পাশাপাশি নিজের টাকায়ও কিছু বীজ ক্রয় করে রোপন করেছি।

কৃষক পিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমার ইচ্ছা যতদিন বেঁচে আছি, দেশের স্বার্থে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বৃক্ষ রোপন করে যাব। এতে আামি কোন সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতা চাই না। এমনকি এসব গাছ বেড়ে উঠলে আমার কোন দাবিও থাকবে না।

ধুবইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুর রহমান মামুন জানান, কৃষক পিয়ারুল ইসলামের এই তালবীজ রোপন নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। তিনি আমাদের এলাকায় তালের বীজ রোপন করেছেন। এটি বেড়ে উঠলে একদিকে যেমন পরিবেশের উপকার হবে। অন্যদিকে বজ্রপাত নিরোধে কাজে লাগবে।

এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, আমাদের বজ্র নিরোধক যে যন্ত্র ছিলো এটি উঠিয়ে নেয়ায় বজ্রপাত বেড়ে গেছে। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে তালগাছের বিশেষ প্রয়োজন। তাই বেশি করে তাল বীজ রোপন করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আমরা কৃষি সম্প্রসারণ থেকে উপজেলার প্রতিটি বøকে তিশটি তাল বীজ রোপর করেছি। এবং উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ৯শ’ করে তালবীজ রোপন করা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি।

পূর্বধলায় নিজ মেয়েকে হত্যা করে শেষ রক্ষা হলো না মায়ের

বৃক্ষপ্রেমী কুষ্টিয়ার পিয়ারুল ইসলাম

আপডেট : ০৪:২৯:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৯

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া :

দেশের স্বার্থে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বৃক্ষ রোপনের ইচ্ছা পিয়ারুল ইসলামের। তার ইচ্ছা নিজের অর্থেই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বৃক্ষ রোপন করবেন তিনি। কুষ্টিয়ার ভেড়ামার উপজেলার কলেজপাড়া এলাকার মৃত আলাউদ্দিন মালিথার ছেলে কৃষক পিয়ারুল ইসলাম। স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়ে তার সংসার। আয়ের উৎস বলতে কেবল নিজের দুই বিঘা জমির চাষাবাদ আর বাড়ি ভাড়া। এই দিয়ে চলে তার সংসারের খচ্চাপাতি। তবে বৃক্ষ রোপনের প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। আবার নিজের টাকায় বিজ কিনে বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার পাশে, ক্যানেলের ধারে এমনকি রেল লাইনের ধারে বৃক্ষ রোপন করেন পিয়ারুল ইসলাম। মুলত দেশে বজ্রপাত বৃদ্ধি পাওয়ায় পিয়ারুল জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে তালের বীজ রোপন করেন। এই ভালো কাজে এলাকার মানুষের মহযোগীতাও পান পিয়ারুল।

শুক্রবার সকালে সরেজমিন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুটি বস্তার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫শ’ তালের বীজ নিয়ে এসেছেন সেখানে রোপন করতে। এরপর স্থানীয় এক কৃষকের সহযোগীতায় এসব তালের বীজ তিনি নিজেই রোপন করছেন।
কৃষক পিয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই বছর ধরে তালের বীজ রোপন করছি। গত বছর প্রায় ১ হাজার তালের বীজ সংগ্রহ করে নিজেই রোপন করেছি। এ বছর ইচ্ছা আছে দুই হাজার তালের বীজ রোপন করা। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪শ’ তালবীজ রোপন করেছি। তবে মিরপুর উপজেলাই এবার প্রথম।

কৃষক পিয়ারুল ইসলাম জানান, তালের বীজ বিভিন্ন গ্রামের রাস্তার পাশে, ক্যানেলের ধারে, রেল লাইনের পাশে রোপন করি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চেষ্টা করি মাঠের মধ্যে রোপন করতে। কারণ, ফাকা মাঠে বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি থাকে। এতে অনেক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।

তিনি আরও জানান, তাজবীজগুলো মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের থেকে সংগ্রহ করি। এ ছাড়াও বিভিন্ন ফলের আড়ৎ থেকে পচা তাল সংগ্রহ করে প্রথমে তা সংরক্ষণ করি। এরপর ভাদ্র মাসের শেষ দিক থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত বীজগুলো রোপন করি। এ বছর তাল বীজ সংগ্রহের পাশাপাশি নিজের টাকায়ও কিছু বীজ ক্রয় করে রোপন করেছি।

কৃষক পিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমার ইচ্ছা যতদিন বেঁচে আছি, দেশের স্বার্থে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বৃক্ষ রোপন করে যাব। এতে আামি কোন সরকারী বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতা চাই না। এমনকি এসব গাছ বেড়ে উঠলে আমার কোন দাবিও থাকবে না।

ধুবইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুর রহমান মামুন জানান, কৃষক পিয়ারুল ইসলামের এই তালবীজ রোপন নিঃসন্দেহে একটি মহৎ কাজ। তিনি আমাদের এলাকায় তালের বীজ রোপন করেছেন। এটি বেড়ে উঠলে একদিকে যেমন পরিবেশের উপকার হবে। অন্যদিকে বজ্রপাত নিরোধে কাজে লাগবে।

এ বিষয়ে মিরপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, আমাদের বজ্র নিরোধক যে যন্ত্র ছিলো এটি উঠিয়ে নেয়ায় বজ্রপাত বেড়ে গেছে। বজ্রপাত থেকে বাঁচতে তালগাছের বিশেষ প্রয়োজন। তাই বেশি করে তাল বীজ রোপন করতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আমরা কৃষি সম্প্রসারণ থেকে উপজেলার প্রতিটি বøকে তিশটি তাল বীজ রোপর করেছি। এবং উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রায় ৯শ’ করে তালবীজ রোপন করা হচ্ছে।