নেত্রকোনা ০৮:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কিছু কথা

  • আপডেট : ১১:৩০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২৮৮
সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের জীবনধারা। একটা সময় ছিল, বাবা মায়ের কাছে শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ শেষে বিদ্যালয়ে পাঠানো হতো শিশুদের। এখন বাবার সঙ্গে মায়েরও ব্যস্ততা বেড়েছে। চাকুরি, সামাজিক দায়িত্ব, সংসার গোছানোসহ সবকিছুতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আমাদের মায়েরা। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক মা তাদের সন্তানকে প্রাথমিক পাঠটুকুও দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রও চালু করেছে।  সেই সাথে নিয়োগ করেছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক।
ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদির পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দক্ষও নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। এর মাধ্যমে শিক্ষার গুনগতমানের উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও প্রসার সম্ভব। এই প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষকদের ভূমিকার উপর নির্ভর করছে শিক্ষার গুনগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা পাওয়ার সুযোগটি। একজন শিক্ষক কেবল শ্রেণিকক্ষের নির্দেশকই নন। প্রাথমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষক সারাজীবন শিক্ষার্থীর মানসপটে স্মৃতি হয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীর সামগ্রিক জীবনেই তিনি পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করেন। তিনি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করবেন। পড়াবেন নির্ভুল উচ্চারণ ও সঠিক রীতিতে। কচি মনের একটি শিশু অবচেতন মনে যা আয়ত্ব করবে, বাকিটা জীবন সে সেটাই চাষাবাদ করবে।
কেবল পাঠ্যক্রমের নির্ধারিত বই নয়, শিশুদের নানা বইয়ের প্রাসঙ্গিক পাঠদান করতে হয়। পড়ার আগ্রহ বিনোদনের সঙ্গে ছোটবেলাতেই তার মনে রাপ দিতে হবে। পড়াশোনা বা ভালো ফলাফলই কেবল একজন শিক্ষার্থীকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেনা, মানসিক গুণাবলীও পরিপূর্ণ মানুষের জন্য অপরিহার্য- বিষয়টি শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিতে হবে।
বর্তমানে ৫+ বয়সের শিশু প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। তাই পাঠের প্রারম্ভিক পর্যায় কেবল শিক্ষকের হাতেই ন্যস্ত হয়। পড়ার বাইরে রয়েছে খেলাধুলা, গান, কবিতা, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ পাঠদান কার্যক্রম। শিশুদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকম খেলনা।
এগুলো শিশুদের মনকে আরও মানবিক করে তোলে। নিয়মিত চর্চা ও খেলাধুলা শরীরকে সুস্থ রাখে। এই বিষয়গুলো কোনো কোনো পরিবারে বাবা-মা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যরা বলে থাকেন হয়তো। কিন্তু শিশুদের মনে শিক্ষকের কথা দাগ কাটে বেশি। শ্রেণিকক্ষে স্যার বলেছেন, তুমি বাবা জানোনা- আদো বুলিতে শিশুদের মুখ থেকে প্রায়ই এ ধরণের কথা শোনা যায়।
সমৃদ্ধ ও উন্নত আগামীর বিনির্মাণে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা তথা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ও আধুনিকায়ন ধারা বাহ্যিক প্রক্রিয়া। রুপকল্প ২০২১ বা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য জনসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। শিশুর সার্বিক বিকাশের বড় অংশ নির্ভর করে বিদ্যালয়ের আনন্দঘন পরিবেশ, শিক্ষকের দক্ষতা ও শিখন শেখানো কার্যক্রমের ওপর। এক্ষেত্রে শিক্ষকের আন্তরিকতা, শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক সুস্থতার প্রতি লক্ষ্য রাখার বিষয়টিও অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। দেশের সার্বিক অবস্থার বিবেচনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অনেকেই আগ্রহী নন। তবে এ আগ্রহের ধরণে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো আকর্ষণীয় ও সন্তোষজনক করা, নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের বর্তমান ধারার সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি। আশার কথা হলো, সরকার এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
মোহাম্মদ শাহা আলম
সহকারি শিক্ষক
মৌদাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
পূর্বধলা, নেত্রকোনা
লেখক, কলামিষ্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। আমাদের প্রকাশনা “পূর্বকন্ঠ” স্বাধীনতার চেতনায় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় অনলাইন । পাঠক আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা। পূর্বকণ্ঠ কথা বলে বাঙালির আত্মপ্রত্যয়ী আহ্বান ও ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার। কথা বলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে। ছড়িয়ে দিতে এ চেতনা দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে। আমরা রাষ্ট্রের আইন কানুন, রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী এবং বাঙ্গালীর আবহমান কালের সামাজিক সহনশীলতার বিপক্ষে পূর্বকন্ঠ কখনো সংবাদ প্রকাশ করে না। আমরা সকল ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন ধর্মমত বা তাদের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আমরা কিছু প্রকাশ করি না। আমাদের সকল প্রচেষ্টা পাঠকের সংবাদ চাহিদাকে কেন্দ্র করে। তাই পাঠকের যে কোনো মতামত আমরা সাদরে গ্রহন করব।
জনপ্রিয়

পূর্বধলায় বণিক সমিতির সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতবিনিময়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ও কিছু কথা

আপডেট : ১১:৩০:০৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ ডিসেম্বর ২০১৯
সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে আমাদের জীবনধারা। একটা সময় ছিল, বাবা মায়ের কাছে শিক্ষার প্রাথমিক পাঠ শেষে বিদ্যালয়ে পাঠানো হতো শিশুদের। এখন বাবার সঙ্গে মায়েরও ব্যস্ততা বেড়েছে। চাকুরি, সামাজিক দায়িত্ব, সংসার গোছানোসহ সবকিছুতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আমাদের মায়েরা। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অনেক মা তাদের সন্তানকে প্রাথমিক পাঠটুকুও দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রও চালু করেছে।  সেই সাথে নিয়োগ করেছে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক।
ভৌত অবকাঠামোগত সুবিধাদির পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দক্ষও নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক। এর মাধ্যমে শিক্ষার গুনগতমানের উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও প্রসার সম্ভব। এই প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষকদের ভূমিকার উপর নির্ভর করছে শিক্ষার গুনগত ও মানসম্পন্ন শিক্ষা পাওয়ার সুযোগটি। একজন শিক্ষক কেবল শ্রেণিকক্ষের নির্দেশকই নন। প্রাথমিক পর্যায়ের কোনো শিক্ষক সারাজীবন শিক্ষার্থীর মানসপটে স্মৃতি হয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীর সামগ্রিক জীবনেই তিনি পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করেন। তিনি শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করবেন। পড়াবেন নির্ভুল উচ্চারণ ও সঠিক রীতিতে। কচি মনের একটি শিশু অবচেতন মনে যা আয়ত্ব করবে, বাকিটা জীবন সে সেটাই চাষাবাদ করবে।
কেবল পাঠ্যক্রমের নির্ধারিত বই নয়, শিশুদের নানা বইয়ের প্রাসঙ্গিক পাঠদান করতে হয়। পড়ার আগ্রহ বিনোদনের সঙ্গে ছোটবেলাতেই তার মনে রাপ দিতে হবে। পড়াশোনা বা ভালো ফলাফলই কেবল একজন শিক্ষার্থীকে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেনা, মানসিক গুণাবলীও পরিপূর্ণ মানুষের জন্য অপরিহার্য- বিষয়টি শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিতে হবে।
বর্তমানে ৫+ বয়সের শিশু প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। তাই পাঠের প্রারম্ভিক পর্যায় কেবল শিক্ষকের হাতেই ন্যস্ত হয়। পড়ার বাইরে রয়েছে খেলাধুলা, গান, কবিতা, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে আকর্ষণীয় ও ফলপ্রসূ পাঠদান কার্যক্রম। শিশুদের খেলাধুলার জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকম খেলনা।
এগুলো শিশুদের মনকে আরও মানবিক করে তোলে। নিয়মিত চর্চা ও খেলাধুলা শরীরকে সুস্থ রাখে। এই বিষয়গুলো কোনো কোনো পরিবারে বাবা-মা কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যরা বলে থাকেন হয়তো। কিন্তু শিশুদের মনে শিক্ষকের কথা দাগ কাটে বেশি। শ্রেণিকক্ষে স্যার বলেছেন, তুমি বাবা জানোনা- আদো বুলিতে শিশুদের মুখ থেকে প্রায়ই এ ধরণের কথা শোনা যায়।
সমৃদ্ধ ও উন্নত আগামীর বিনির্মাণে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা তথা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে ও আধুনিকায়ন ধারা বাহ্যিক প্রক্রিয়া। রুপকল্প ২০২১ বা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য জনসম্পদ উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। শিশুর সার্বিক বিকাশের বড় অংশ নির্ভর করে বিদ্যালয়ের আনন্দঘন পরিবেশ, শিক্ষকের দক্ষতা ও শিখন শেখানো কার্যক্রমের ওপর। এক্ষেত্রে শিক্ষকের আন্তরিকতা, শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক সুস্থতার প্রতি লক্ষ্য রাখার বিষয়টিও অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। দেশের সার্বিক অবস্থার বিবেচনায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অনেকেই আগ্রহী নন। তবে এ আগ্রহের ধরণে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের বেতন কাঠামো আকর্ষণীয় ও সন্তোষজনক করা, নিয়োগ প্রক্রিয়া সুষ্ঠু করা এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণের বর্তমান ধারার সংস্কার করা অত্যন্ত জরুরি। আশার কথা হলো, সরকার এ ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
মোহাম্মদ শাহা আলম
সহকারি শিক্ষক
মৌদাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
পূর্বধলা, নেত্রকোনা
লেখক, কলামিষ্ট।