নেত্রকোনার পূর্বধলা সরকারি কলেজে বেশ কিছুদিন যাবত শিক্ষকদের মাঝে বিবদমান দু’গ্রুপে কোন্দল ও স্থানীয় সংসদসদস্যের ছবি অপসারণসহ বিভিন্ন বিষয়ের দ্বন্ধ গত সোমবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে নিরসন হলো।
জানা যায়, কলেজে কোন্দলের কারণে শিক্ষকদের ক্লাশ বর্জন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কর্তৃক উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর শিক্ষক-কর্মচারির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ, অফিস সহকারীদের বিরুদ্ধে থানায় জিডি, কলেজ থেকে স্থানীয় সংসদসদস্যের ছবি অপসারণের দাবী, শিক্ষকদের অভ্যন্তরীন বেতন-ভাতা প্রাপ্তি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পার্থক্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের মধ্যে দু’গ্রুপে কোন্দলের সৃষ্টি হয়। কলেজ ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ।
উপজেলার ঐতিহ্যবাহি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী কলেজটিকে গত ৮ আগস্ট সরকারিকরণ করা হয়। জাতীয়করণের পর কলেজর উপাধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক রতন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সিনিয়র-জুনিয়র শিক্ষকদের দ্বন্দ প্রকট হয়। কলেজ সরকারিকরণের পর চলতি বছর সিনিয়র ৩৫জন শিক্ষক দুই ধাপে প্রায় ৪৭লক্ষ টাকা বকেয়া বেতন ভাতা হিসেবে গ্রহণ করেন। এমপিও বিহীন ৯জন শিক্ষককে পূর্বে অভ্যন্তরীন বেতন প্রদান করলেও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করে দেন। এই নিয়ে চাপা উত্তেজনা জুনিয়রদের মধ্যে বিরাজমান ছিল।
একপর্যায়ে কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী অধ্যক্ষকে প্রাণনাশের হুমকী দিলে অধ্যক্ষ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন ও ২১আগস্ট ৩জন অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে থানায় সাধারন ডায়েরী করেন।
এতে শিক্ষকদের একটি অংশ ক্লাশ বর্জন করেন। সরকারি কলেজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির সাথে কলেজ পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছবি অপসারণের দাবীতে শিক্ষক ও সচেতন মহলেও ছিল চাপা ক্ষোভ।
এক পর্যায়ে কলেজ প্রশাসন গত ১জুলাই সংসদসদস্যের ছবি অপসারণ করলে পরের দিন এমপি সমর্থকরা আবারও কলেজে যথাস্থানে এমপি’র ছবি টানিয়ে দেয়। এতে দু’পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করলে কলেজ ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) উম্মে কুলসুম গত সোমবার কলেজ পরিদর্শনে গিয়ে এমপি’র ছবি অপসারণ করে দু’পক্ষের সাথে বৈঠকে বসে সকল সমস্যার সমাধানসহ দীর্ঘ দিনের কোন্দল নিরসন করেন ।
এ ব্যপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আনোয়ারুল হক রতন বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে আজ থেকে কলেজে আবারও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে এসছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে কুলসুম বলেন, ইতোমধ্যে যারা অভ্যন্তরিন বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছে তারা এমপিও ভূক্ত শিক্ষক হিসেবে বকেয়া উত্তোলন করেছেন। যাদের অভ্যন্তরিন বেতন-ভাতা বন্ধ করেছেন অধ্যক্ষ তারা এমপিও বিহীন শিক্ষক ।
তাই সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের অভ্যন্তরিন বেতন-ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। তাছাড়া কোনো সরকারি কলেজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবির সাথে অন্য কোন ব্যক্তির ছবি থাকার বিধান নেই বলেই সংসদ সদস্যের ছবি অপসারণ করা হয়েছে। আশা করি এখন থেকে কলেজে শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে আসবে।