নেত্রকোনা ০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনার প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় চলতি এসএসসি পরীক্ষার ভেন্যু হারালো

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগের চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। নেত্রকোনা জেলা শহরের শতবছর পুরনো এতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বর্তমান মোক্তারপাড়া সড়কে ১৮৮৯ খ্রীস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। যে বিদ্যালয়ের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নানা ইতিহাস। বিদ্যালয় শুরুর ঠিক কত সন থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা ভেন্যু চালু হয় কেই বলতে না পারলেও আনুমানিক অনেকেই জানান ব্রিটিশ আমল থেকেই।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ছাত্র সংখ্যা বিপুল পরিমাণ থাকলেও এবছর হারালো পরীক্ষা কেন্দ্র। কেউ কেউ বলছেন স্কুলের ম্যনেজিং কমিটি ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা তদন্তের ঘটনায় ঘটেছে এমনটি। আবার কেউ কেউ বলছেন ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম স্থগিতাদেশের ঘটনায় জেলা মাধ্যমিক কর্মকতার স্বাক্ষরে বেতন উত্তোলনসহ ফেইসবুকে নানা সমস্যার কথা ভাইরাল হওয়ায় এমনটি হয়েছে। হরিয়েছে পুরনো ঐতিহ্য। আবার স্কুলের শিক্ষকরা দাবী করছেন ইর্ষান্বিত হয়েই এটি করা হয়েছে।

পরীক্ষা কেন্দ্রের সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিবছর জেলা সদরে একটি কেন্দ্র ও চারটি ভেন্যুতে পরীক্ষা কার্যক্রম চলতো। এ বছর সদর উপজেলার মোট ২২টি স্কুল নিয়ে দুটি কেন্দ্র করে মোট ৫টি ভেন্যুতে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তারমধ্যে মূল কেন্দ্র আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১টি স্কুলের তিনটি ভেন্যুতে ১৫২৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে।

অন্যদিকে এ বছর নতুন হওয়া চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুইটি ভেন্যুতে ১১টি স্কুলের এক-দুই বিষয়ে অকৃতকার্ষ সহ আংশিক মিলে ৬২০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। এর মধ্যে চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষার্থী মাত্র ৩৫ জন এবং দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ৫৬৭ জন। দত্ত স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যাও সকল স্কুল ছাড়িয়ে ২৮০০ জন।

এ ব্যাপারে দত্ত স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, চন্দ্রনাথ স্কুলে এমন বছরও গিয়েছে কোন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় পাসই করেনি। ছাত্রসংখ্যা শতেকখানি হয় কিনা সন্দেহ আছে। চন্দ্রনাথ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সংরক্ষিত আসনের এমপি হওয়ার পর এ বছর স্কুলটিকে কেন্দ্র এবং ভেন্যু করা হয়েছে।

পরীক্ষার পূর্বে কেন্দ্র ভেন্যু নির্ধারণী সভায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মিলন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দত্ত স্কুলটিতে আসতে ভৌগলিক কারণ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের মেছুয়া বাজারে জ্যামে পড়তে হয় কারণ দেখিয়ে আদর্শ বালিকায় ভেন্যু দাবী করনে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেই মিলন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আসন পড়েছে দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় পার হয়ে এক মাথায় আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।

এ প্রেক্ষিতে মিলন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল খান বলেন, আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তাকে হল সুপার করায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সিট পড়েছে আঞ্জুমান স্কুলে।

এদিকে দত্ত স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে ময়মনসিংহ বোর্ড থেকে ম্যনেজিং কমিটির নিয়মিত কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ আসে। ডিসেম্বর মাসের শিক্ষকদের বেতন উত্তোলন হয় জেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার স্বাক্ষরের মাধ্যমে। পরবর্তীতে ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ সহ প্রধান তিনটি শর্তে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারপত্র প্রেরণ করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এবিএম শাহজাহান কবীর জানান, নেত্রকোনা জেলা শহরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এটি। সিসি ক্যামরোয় অর্ন্তভুক্ত থাকায় পরীক্ষার পরিবেশ অত্যন্ত সুশৃঙ্খল থাকে। যা শহরতলীর বিভিন্ন স্কুলের পছন্দ নয়। জেলা প্রশাসক সভায় দত্ত এবং আদর্শ বালিকার নাম প্রস্তাব দিলেও জানযটের কারণ দেখিয়েছে দুটি শহরতলীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের বিষয় মাথায় রেখেই প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু সেই সকল শিক্ষার্থীরা সেই জানযট অতিক্রম করে একেবারে শহরের শেষ মাথায় গিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাহলে অবশেষে হলোটা কি? সঙ্গত কারণেই বুঝা যায় সম্পূর্ণই দত্ত হাই বিদ্যালয়ের সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে এটি করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। আমাদের প্রকাশনা “পূর্বকন্ঠ” স্বাধীনতার চেতনায় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় অনলাইন । পাঠক আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা। পূর্বকণ্ঠ কথা বলে বাঙালির আত্মপ্রত্যয়ী আহ্বান ও ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার। কথা বলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে। ছড়িয়ে দিতে এ চেতনা দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে। আমরা রাষ্ট্রের আইন কানুন, রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী এবং বাঙ্গালীর আবহমান কালের সামাজিক সহনশীলতার বিপক্ষে পূর্বকন্ঠ কখনো সংবাদ প্রকাশ করে না। আমরা সকল ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন ধর্মমত বা তাদের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আমরা কিছু প্রকাশ করি না। আমাদের সকল প্রচেষ্টা পাঠকের সংবাদ চাহিদাকে কেন্দ্র করে। তাই পাঠকের যে কোনো মতামত আমরা সাদরে গ্রহন করব।
জনপ্রিয়

পূর্বধলায় বণিক সমিতির সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতবিনিময়

নেত্রকোনার প্রাচীনতম বিদ্যাপিঠ দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় চলতি এসএসসি পরীক্ষার ভেন্যু হারালো

আপডেট : ১১:২৮:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২০

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবারই প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে ময়মনসিংহ বিভাগের চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা। নেত্রকোনা জেলা শহরের শতবছর পুরনো এতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়। শহরের প্রাণকেন্দ্রে বর্তমান মোক্তারপাড়া সড়কে ১৮৮৯ খ্রীস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। যে বিদ্যালয়ের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নানা ইতিহাস। বিদ্যালয় শুরুর ঠিক কত সন থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা ভেন্যু চালু হয় কেই বলতে না পারলেও আনুমানিক অনেকেই জানান ব্রিটিশ আমল থেকেই।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পর ছাত্র সংখ্যা বিপুল পরিমাণ থাকলেও এবছর হারালো পরীক্ষা কেন্দ্র। কেউ কেউ বলছেন স্কুলের ম্যনেজিং কমিটি ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা তদন্তের ঘটনায় ঘটেছে এমনটি। আবার কেউ কেউ বলছেন ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম স্থগিতাদেশের ঘটনায় জেলা মাধ্যমিক কর্মকতার স্বাক্ষরে বেতন উত্তোলনসহ ফেইসবুকে নানা সমস্যার কথা ভাইরাল হওয়ায় এমনটি হয়েছে। হরিয়েছে পুরনো ঐতিহ্য। আবার স্কুলের শিক্ষকরা দাবী করছেন ইর্ষান্বিত হয়েই এটি করা হয়েছে।

পরীক্ষা কেন্দ্রের সূত্র থেকে জানা যায়, প্রতিবছর জেলা সদরে একটি কেন্দ্র ও চারটি ভেন্যুতে পরীক্ষা কার্যক্রম চলতো। এ বছর সদর উপজেলার মোট ২২টি স্কুল নিয়ে দুটি কেন্দ্র করে মোট ৫টি ভেন্যুতে পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তারমধ্যে মূল কেন্দ্র আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১১টি স্কুলের তিনটি ভেন্যুতে ১৫২৬ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে।

অন্যদিকে এ বছর নতুন হওয়া চন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুইটি ভেন্যুতে ১১টি স্কুলের এক-দুই বিষয়ে অকৃতকার্ষ সহ আংশিক মিলে ৬২০ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। এর মধ্যে চন্দ্রনাথ স্কুলের পরীক্ষার্থী মাত্র ৩৫ জন এবং দত্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী ৫৬৭ জন। দত্ত স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যাও সকল স্কুল ছাড়িয়ে ২৮০০ জন।

এ ব্যাপারে দত্ত স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, চন্দ্রনাথ স্কুলে এমন বছরও গিয়েছে কোন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় পাসই করেনি। ছাত্রসংখ্যা শতেকখানি হয় কিনা সন্দেহ আছে। চন্দ্রনাথ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সংরক্ষিত আসনের এমপি হওয়ার পর এ বছর স্কুলটিকে কেন্দ্র এবং ভেন্যু করা হয়েছে।

পরীক্ষার পূর্বে কেন্দ্র ভেন্যু নির্ধারণী সভায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মিলন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দত্ত স্কুলটিতে আসতে ভৌগলিক কারণ দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের মেছুয়া বাজারে জ্যামে পড়তে হয় কারণ দেখিয়ে আদর্শ বালিকায় ভেন্যু দাবী করনে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে সেই মিলন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আসন পড়েছে দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় পার হয়ে এক মাথায় আঞ্জুমান আদর্শ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।

এ প্রেক্ষিতে মিলন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল খান বলেন, আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে তাকে হল সুপার করায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সিট পড়েছে আঞ্জুমান স্কুলে।

এদিকে দত্ত স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে ময়মনসিংহ বোর্ড থেকে ম্যনেজিং কমিটির নিয়মিত কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ আসে। ডিসেম্বর মাসের শিক্ষকদের বেতন উত্তোলন হয় জেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার স্বাক্ষরের মাধ্যমে। পরবর্তীতে ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ সহ প্রধান তিনটি শর্তে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারপত্র প্রেরণ করে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক এবিএম শাহজাহান কবীর জানান, নেত্রকোনা জেলা শহরের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এটি। সিসি ক্যামরোয় অর্ন্তভুক্ত থাকায় পরীক্ষার পরিবেশ অত্যন্ত সুশৃঙ্খল থাকে। যা শহরতলীর বিভিন্ন স্কুলের পছন্দ নয়। জেলা প্রশাসক সভায় দত্ত এবং আদর্শ বালিকার নাম প্রস্তাব দিলেও জানযটের কারণ দেখিয়েছে দুটি শহরতলীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের বিষয় মাথায় রেখেই প্রতিবাদ করিনি। কিন্তু সেই সকল শিক্ষার্থীরা সেই জানযট অতিক্রম করে একেবারে শহরের শেষ মাথায় গিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাহলে অবশেষে হলোটা কি? সঙ্গত কারণেই বুঝা যায় সম্পূর্ণই দত্ত হাই বিদ্যালয়ের সাফল্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে এটি করা হয়েছে।