নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ভেজা বালুবাহী ট্রাক্টর, ট্রাক ও গাড়িতে অতিরিক্ত বালু পরিবহনে পৌরশহরের সবক’টি রাস্তা বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা সহ সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের চুড়ান্ত মুল্যায়ন পরীক্ষা প্রায় শিক্ষর্থীদের নিয়মিত উপস্থিত হতে পারছেনা। স্থানীয় বিক্ষুব্ধরা প্রশাসনের দারস্থ হওয়ার পরেও কোন কাজে আসছে না।
এ নিয়ে শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, সাধুপাড়াস্থ এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসায়ীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তাদের সন্তানেরা স্কুলে যেতে পারছেনা। রাস্তায় বর্ষা মৌসুমে যে ধরনের কাঁদা জমার কথা, বর্তমানে রাস্তায় তার চেয়েও বেশি কাঁদা জমে আছে। অপ্রাপ্ত বয়স্করা লড়ি (ট্রাক্টর) চালানোর ফলে রাস্তার পাশের্^ সুসং আদর্শ বিদ্যানিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পৌর কবরস্থান, দি চাইল্ড প্রিপারেটরী স্কুলের সীমানা প্রাচীর অনেক অংশ ভেঙ্গে দিয়েছে। পৌর শহরের রাস্তায় এখন যেন বোরো ধা ক্ষেত।
বাসা থেকে ভালো কোন ড্রেস পড়ে বের হলেও বাসায় ফিরতে হচ্ছে কাঁদা মাখা জামা-কাপড় নিয়ে। অনেক শিক্ষার্থীরা এখন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য অভিভাবকের। শহরের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, মাদ্রাসা’র মতো অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অবৈধ লড়ি ট্রাক্টর, থ্রি-হুইলার চালিত অটো রিক্সার দাপটে কমতে শুরু করেছে ওই সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি। এর কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষকগন বলেন, পৌরশহরের রাস্তা এখন মরণ ফাঁদ। অদক্ষ চালক আর অতি মাত্রার গতি নিয়ে যেভাবে লড়ি (ট্রাক্টর) রাস্তায় চলাচল করছে তাতে শিশুরা এখন স্কুল বিমুখ। সাধাপাড়াস্থ সাবেক কাউন্সিরর শহীদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যারা এলাকার নীতি নির্ধারক তাঁদেরই তো সোচ্চার নয়। লড়ি সংগঠন করে অনেকেই অর্থের মহোৎসবে নেমে পড়েছেন। নিয়ন্ত্রকদের নাম ভাঙ্গিয়ে নানাভাবে ফায়দা লুটার চেষ্টা করছেন বলেও অভিযোগ একটি মহলে বিরুদ্ধে।
বিজ্ঞ আইনজীবী সেলিম মীরধা ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, আমরা কি দুর্গাপুর থেকে চলে যাবো ? দুর্গাপুরের জনগন কি অন্ধ ? এখানে কি একজন সুস্থ মানুষ চলতে পারে? মানুষ হিসেবে তার যে নৈতিক অধিকার রয়েছে সবদিক থেকেই তা ক্ষুন্ন হচ্ছে। সবাই মিলে সোচ্চার হয়ে এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
অতিরিক্ত শব্দ দূষণ, মাত্রারিক্ত বালু বোঝাই, গাড়ির বেপোরোয়া গতি, অদক্ষ চালকদের দৌরাত্ব, ভিজে বালু পরিবহনে শহরের সবকটি রাস্তার এখন বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ এ প্রতিনিধি কে জানান, অবৈধ লড়ি ট্রাক্টর বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনকে বারংবার বলা হচ্ছে। কোন রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা নিতে ঢিলেমেসি করছেন কর্তৃপক্ষ আমার জানা নাই।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম বলেন, শহরে অবাদে লড়ি ট্রাক্টরের চলাচল বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যে আলোচনা করেছি। আগামী দু‘একদিনের মধ্যে একটি ঘোষণা আসবে।
স্থানীয় সাংসদ সদস্য মানু মজুমদার বলেন, ভিজাবালু পরিবহনে শহরের অবস্থা সত্যিই নাজুক হয়ে পড়েছে। অনেকেই আমার কাছে অভিযোগ করেছে। দুর্গাপুর শহর দিয়ে সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত লড়ি ট্রাক্টর চলবে বলে জেলা প্রশাসক বরাবর আমি ডিও দিয়েছি। কেন কার্যকর হচ্ছে না, দু‘একদিনের মধ্যে এর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কোন ইন্ধনে নিয়ম বর্হিভূত বালু উত্তোলন ও ভেজা বালু পরিবহন করা হচ্ছে, মহামান্য আদালতে নির্দেশ থাকা সত্বেও বিরিশিরি খেলার মাঠ দিয়ে বহন করা হচ্ছে বালু, ডাইভার্সনের নাম করে পরিবহন থেকে নেয়া হচ্ছে চাঁদা, পরিবেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে সর্বনাশ করা হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী সুসং দুর্গাপুরের এ প্রশ্ন গুলো ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ জনগনের কাছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।