গত ১ জানুয়ারী সারাদেশে নতুন বই উৎসব পালিত হয়েছে। সরকার বিনা মূল্য দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীরা হাতে তুলে দিয়েছে নতুন বই। আর এই নতুন বই নিয়ে বিদ্যালয়েও আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা । সবার চোখে মুখেই যেনো বইছে নতুন বই পাওয়ার আন্দন। কিন্তু এই আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই অভিযোগ উঠেছে সরকারী বই বিক্রির।
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে এমন একটি অভিযোগ। পৌরসভাস্থ ৭নং বিরিশিরির দক্ষিণ ভবানীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম গতকাল সোমবার দুপুরে ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ শিক্ষাবর্ষের সরকারী বই স্থানীয় এক হকারের কাছে বিক্রিকালে হাতে না হাতেই বই আটক করেছে এলাকাবাসীরা।
পৌর শহরের ৭নং বিরিশিরি ওয়ার্ডের দক্ষিণ ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৬৩ সালে স্থাপিত হয় । পরে ১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণের আওতায় আনে সরকার। বর্তমানে শিশু শ্রেণীতে থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ২ শত ৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে বিদ্যালয়টিতে। আর বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে পাঠ্য বই বিতরণ করে সরকার। এই বই এর অবশিষ্ট কিছু সহ পুরনো শিক্ষা বর্ষের সরকারী বই সহ বিক্রিয় করে প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম।
স্থানীয় সূত্রে জান াযায়, আটককৃত বইয়ের মাঝে বিদ্যালয়ে ১ম ও ২য় সহ সকল শ্রেণীর বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সমাজ, বিজ্ঞান সহ নানা রকম নতুন পুরাতন প্রায় ১ শত ২৫ কেজি সরকারী বই আটক করে তারা। এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিক্ষার ১ শত ১৫ কেজি খাতা যা প্রধান শিক্ষক হকারের কাছে প্রতি কেজি বই ৮ টাকা ও খাতা ৯ টা দরে বিক্রিয় করে। বই গুলো নিয়ে হকার দোকানে যাওয়ার পথে স্থানীয়রা হকারকে আটক করে। পরে তারা জানতে পারে প্রধান শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলামই সরকারী বই গুলো অবৈধ ভাবে বিক্রির করছে।
বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সদস্যরা ঘটনা স্থলে গিয়ে হকারের কাছ থেকে প্রাথমিক শাখার সরকারী বই গুলোকে জব্দ করেন। এই সময় স্থানীয়রা সরকারী বই বিক্রির করা জন্য উত্তোজিত হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়দের শান্ত করে জব্দকৃত সরকারী বই ও পরিক্ষার খাতা গুলোকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে নিয়ে আসেন সদস্যরা।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহাগীর আলম জানায়, শুধু বই নয় আরো গত তিন মাস পূর্বে নতুন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলামের সাথে যোগসাজসে প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়ের চত্বরের গাছ থেকে শুরু করে নানা রকম দুর্নীতি করে আসছে তারা। আর শিক্ষার্থী বই চাইলেই বলে বই নাই। কিন্তু তারা বিক্রির জন্য বই ঠিকই থাকে।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বই গুলো পরে আছে। ফলে কক্ষ সবসময় বন্ধ করে রাখতে হয় তাই শ্রেণীকক্ষে বৃদ্ধি আর পুরনো বই গুলোতে বিদ্যালয় থেকে সরানো জন্যই বই আর খাতা গুলো বিক্রিয় করেছি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সরকারী বই বিক্রিয় করা কোনো নিয়ম বা অনুমতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নেই। আর দক্ষিণ ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যে কাজটি করেছে তা পুরোপুরি অন্যায়। তার বিরুদ্ধে জেলার কর্মকর্তা সাথে সমন্বয় করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।