নেত্রকোনা ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাঙ্গাইলে গাছ না কেটেও মামলার আসামী বৃদ্ধ আব্দুল হালিম

  • আপডেট : ০১:৪৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৫৭

রাইসুল ইসলাম লিটন, টাঙ্গাইলঃ

টাঙ্গাইলে একটি জায়গা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে গাছ না কেটেও গাছ কাটা মামলার আসামী হয়েছেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ মোঃ আব্দুল হালিম। ঘটনাটি টাঙ্গাইল পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের সন্তোষ বাগবাড়ী এলাকার। বৃদ্ধ আব্দুল হালিম বাগবাড়ী এলাকার মৃত আলিম উদ্দীনের ছেলে। এর পূর্বে গত ২২ মে আব্দুল হালিমের দুই ছেলে মোঃ রফিক মিঞা (৩৫)ও মোঃ রায়হানকে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে অন্য একটি মামলার আসামী করেছে প্রতিপক্ষ একই এলাকার বুদ্ধ আলী।

জানা গেছে, সন্তোষ মৌজার বাগবাড়ী এলাকার এস এ খতিয়ানের ৫১৪ দাগের সাড়ে ৮ শতাংশ বসতবাড়ীর জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছে বুদ্ধু মিঞা ও নৃপেন চন্দ্র দাসের মধ্যে। বর্তমানে এই বসতবাড়ীতে নৃপেন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছে।

কাঠ মিস্ত্রি নৃপেন অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির লোক বলে জানা গেছে। প্রতিবেশী আব্দুল হালিম নিরীহ নৃপেনের পক্ষে কথা বলায় তাকে ও তার দুই ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে এলাকাবাসী দাবী।

গত ২২ মে ২০১৭ তারিখে বুদ্ধু মিঞা টাঙ্গাইল সিনিয়র জজ আদালতে উল্লেখিত জায়গার গাছ কাটার উপর অস্থায়ী ও অন্তবর্তী কালীন নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে। পরে মাননীয় বিজ্ঞ আদালত শুনানীর পর ৮ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর পর গত ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে হঠাৎ করে বুদ্ধু মিঞা নৃপেনকে ১নং আসামী এবং আব্দুল হালিমকে ২ নং আসামী করে ৩৫টি গাছ কাটার অভিযোগে একই আদালতে আরজি পেশ করে। আরজিতে গাছ কাটার ক্ষতি পূরন বাবদ ২ লাখ টাকা দাবী করা হয়। বুদ্ধু মিঞা দাবী, এই ৩৫ টি গাছের মধ্যে ছোটবড় ১০টি কাঠাল গাছ, ১০টি আকাশ মনি গাছ, ১০টি ইউক্যালিপটাস ও ৫ টি মেহেগনি গাছ ছিল।

সরেজমিনে বাগবাড়ী গিয়ে দেখা যায়, নালিশি জমিতে মামলার ১ নং আসামী নৃপেনের বসতবাড়ী। এই সাড়ে ৮ শতাংশ জায়গায় একটি বড় টিনের বসত ঘর এবং একটি রান্না ঘর রয়েছে। এ ছাড়া একটি টিউবল রয়েছে বাড়ীর পূর্ব দিকে। পূর্ব-দক্ষিন দিক ঘেসে নিপেনের গোছলখানা। মামলায় উল্লেখিত কর্তন কৃত ১০টি কাঠাল গাছ, ১০টি আকাশ মনি গাছ ও ১০ টি ইউক্যালিপটাস ও ৫টি মেহেগনি গাছের কাটা গুড়ির কোন অস্তিত নেই।

গাছ কাটার কোন চিহ্নও নেই কোথাও। তবে বসতবাড়ীটিতে কয়েকটি আম গাছ ও কয়েকটি পেয়ারা গাছ রয়েছে । মাত্র সাড়ে ৮ শতাংশ জায়গার মধ্যে ৩৫টি ছোট বড় গাছ, বসত ভিটে ও আলাদা রান্না ঘর ও আলাদা গোছলখানা বুদ্ধু আলীর যে দাবী, সেটা মিথ্যা বলেই প্রতিয়মান হয়।

স্থানীয় বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল, সফিকুল ইসলাম, মোছা রুনি বেগম জানান, ওই বাড়ীতে কোন ধরনের গাছ কাটা হয়নি। ঘটনাটি সম্পুর্ন সাজানো। এই এলাকার কতিপয় ভূমি দস্যু নৃপেনের বসতবাড়ী থেকে তাকে উচ্ছেদের করে সেটা জবর দখলের জন্য বিভিন্ন ধরনের হয়রানী মূলক মামলা করছে।

আব্দুল হালিম নৃপেনকে সাহায্যে করছে বলে তাকে এবং তার পরিবারকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে তারা জানায়।

এ প্রসঙ্গে মামলার প্রধান আসামী নৃপেন চন্দ্র দাস বলেন, আমরা কোন ধরনের গাছ কাটিনি। এটা একটা মিথ্যা মামলা। আমার এই বসত ভিটে দখলের জন্য বুদ্ধু মিঞা ও এলাকার একটি প্রভাবশালী জমি দখল চক্র এই ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার জমি জবর দখল করতে চাচ্ছে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

হয়রানির শিকার বৃদ্ধ মোঃ আব্দুল হালিম (৬৫) জানান, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। বর্তমানে কাজ করতে পারি না। আমার প্রতিবেশী নৃপেন অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির লোক। আমার বাড়ীর পাশে নৃপেনের সাড়ে ৮ শতাংশ জায়গা বুদ্ধু মিঞা জোর পূর্বক দখল করতে চাইলে আমি তালে বাধা প্রদান করি।

এতে বুদ্ধু মিঞা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মিথ্যা গাছ কাটার মামলায় জড়িয়েছে। তারা আমার দুই পুত্রকেও মিথ্যা মামলার আসামী করেছে। এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল হিন্দুদের জায়গা জমি দখল করতে চায়। সেই চক্রকে বাধা দেওয়াতে আমি তাদের শক্রতে পরিনত হয়েছি।

টাঙ্গাইল পৌর সভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মোঃ ইসমাইল হোসেন বিষয়টি সর্ম্পকে বলেন, বিষয়টি বিবাদী পক্ষের মাধ্যমে জেনেছি। যেহেতু মামলাটি আদালতের বিচারাধীন বিষয় তাই এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাই না।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। আমাদের প্রকাশনা “পূর্বকন্ঠ” স্বাধীনতার চেতনায় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় অনলাইন । পাঠক আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা। পূর্বকণ্ঠ কথা বলে বাঙালির আত্মপ্রত্যয়ী আহ্বান ও ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার। কথা বলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে। ছড়িয়ে দিতে এ চেতনা দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে। আমরা রাষ্ট্রের আইন কানুন, রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী এবং বাঙ্গালীর আবহমান কালের সামাজিক সহনশীলতার বিপক্ষে পূর্বকন্ঠ কখনো সংবাদ প্রকাশ করে না। আমরা সকল ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন ধর্মমত বা তাদের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আমরা কিছু প্রকাশ করি না। আমাদের সকল প্রচেষ্টা পাঠকের সংবাদ চাহিদাকে কেন্দ্র করে। তাই পাঠকের যে কোনো মতামত আমরা সাদরে গ্রহন করব।
জনপ্রিয়

পূর্বধলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের দাফন সম্পন্ন

টাঙ্গাইলে গাছ না কেটেও মামলার আসামী বৃদ্ধ আব্দুল হালিম

আপডেট : ০১:৪৮:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

রাইসুল ইসলাম লিটন, টাঙ্গাইলঃ

টাঙ্গাইলে একটি জায়গা নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে গাছ না কেটেও গাছ কাটা মামলার আসামী হয়েছেন ৬৫ বছরের বৃদ্ধ মোঃ আব্দুল হালিম। ঘটনাটি টাঙ্গাইল পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের সন্তোষ বাগবাড়ী এলাকার। বৃদ্ধ আব্দুল হালিম বাগবাড়ী এলাকার মৃত আলিম উদ্দীনের ছেলে। এর পূর্বে গত ২২ মে আব্দুল হালিমের দুই ছেলে মোঃ রফিক মিঞা (৩৫)ও মোঃ রায়হানকে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে অন্য একটি মামলার আসামী করেছে প্রতিপক্ষ একই এলাকার বুদ্ধ আলী।

জানা গেছে, সন্তোষ মৌজার বাগবাড়ী এলাকার এস এ খতিয়ানের ৫১৪ দাগের সাড়ে ৮ শতাংশ বসতবাড়ীর জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছে বুদ্ধু মিঞা ও নৃপেন চন্দ্র দাসের মধ্যে। বর্তমানে এই বসতবাড়ীতে নৃপেন তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছে।

কাঠ মিস্ত্রি নৃপেন অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির লোক বলে জানা গেছে। প্রতিবেশী আব্দুল হালিম নিরীহ নৃপেনের পক্ষে কথা বলায় তাকে ও তার দুই ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে এলাকাবাসী দাবী।

গত ২২ মে ২০১৭ তারিখে বুদ্ধু মিঞা টাঙ্গাইল সিনিয়র জজ আদালতে উল্লেখিত জায়গার গাছ কাটার উপর অস্থায়ী ও অন্তবর্তী কালীন নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে। পরে মাননীয় বিজ্ঞ আদালত শুনানীর পর ৮ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আবেদন মঞ্জুর করেন।

এর পর গত ১৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে হঠাৎ করে বুদ্ধু মিঞা নৃপেনকে ১নং আসামী এবং আব্দুল হালিমকে ২ নং আসামী করে ৩৫টি গাছ কাটার অভিযোগে একই আদালতে আরজি পেশ করে। আরজিতে গাছ কাটার ক্ষতি পূরন বাবদ ২ লাখ টাকা দাবী করা হয়। বুদ্ধু মিঞা দাবী, এই ৩৫ টি গাছের মধ্যে ছোটবড় ১০টি কাঠাল গাছ, ১০টি আকাশ মনি গাছ, ১০টি ইউক্যালিপটাস ও ৫ টি মেহেগনি গাছ ছিল।

সরেজমিনে বাগবাড়ী গিয়ে দেখা যায়, নালিশি জমিতে মামলার ১ নং আসামী নৃপেনের বসতবাড়ী। এই সাড়ে ৮ শতাংশ জায়গায় একটি বড় টিনের বসত ঘর এবং একটি রান্না ঘর রয়েছে। এ ছাড়া একটি টিউবল রয়েছে বাড়ীর পূর্ব দিকে। পূর্ব-দক্ষিন দিক ঘেসে নিপেনের গোছলখানা। মামলায় উল্লেখিত কর্তন কৃত ১০টি কাঠাল গাছ, ১০টি আকাশ মনি গাছ ও ১০ টি ইউক্যালিপটাস ও ৫টি মেহেগনি গাছের কাটা গুড়ির কোন অস্তিত নেই।

গাছ কাটার কোন চিহ্নও নেই কোথাও। তবে বসতবাড়ীটিতে কয়েকটি আম গাছ ও কয়েকটি পেয়ারা গাছ রয়েছে । মাত্র সাড়ে ৮ শতাংশ জায়গার মধ্যে ৩৫টি ছোট বড় গাছ, বসত ভিটে ও আলাদা রান্না ঘর ও আলাদা গোছলখানা বুদ্ধু আলীর যে দাবী, সেটা মিথ্যা বলেই প্রতিয়মান হয়।

স্থানীয় বাগবাড়ী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল জলিল, সফিকুল ইসলাম, মোছা রুনি বেগম জানান, ওই বাড়ীতে কোন ধরনের গাছ কাটা হয়নি। ঘটনাটি সম্পুর্ন সাজানো। এই এলাকার কতিপয় ভূমি দস্যু নৃপেনের বসতবাড়ী থেকে তাকে উচ্ছেদের করে সেটা জবর দখলের জন্য বিভিন্ন ধরনের হয়রানী মূলক মামলা করছে।

আব্দুল হালিম নৃপেনকে সাহায্যে করছে বলে তাকে এবং তার পরিবারকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে তারা জানায়।

এ প্রসঙ্গে মামলার প্রধান আসামী নৃপেন চন্দ্র দাস বলেন, আমরা কোন ধরনের গাছ কাটিনি। এটা একটা মিথ্যা মামলা। আমার এই বসত ভিটে দখলের জন্য বুদ্ধু মিঞা ও এলাকার একটি প্রভাবশালী জমি দখল চক্র এই ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার জমি জবর দখল করতে চাচ্ছে। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

হয়রানির শিকার বৃদ্ধ মোঃ আব্দুল হালিম (৬৫) জানান, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। বর্তমানে কাজ করতে পারি না। আমার প্রতিবেশী নৃপেন অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির লোক। আমার বাড়ীর পাশে নৃপেনের সাড়ে ৮ শতাংশ জায়গা বুদ্ধু মিঞা জোর পূর্বক দখল করতে চাইলে আমি তালে বাধা প্রদান করি।

এতে বুদ্ধু মিঞা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মিথ্যা গাছ কাটার মামলায় জড়িয়েছে। তারা আমার দুই পুত্রকেও মিথ্যা মামলার আসামী করেছে। এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল হিন্দুদের জায়গা জমি দখল করতে চায়। সেই চক্রকে বাধা দেওয়াতে আমি তাদের শক্রতে পরিনত হয়েছি।

টাঙ্গাইল পৌর সভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মোঃ ইসমাইল হোসেন বিষয়টি সর্ম্পকে বলেন, বিষয়টি বিবাদী পক্ষের মাধ্যমে জেনেছি। যেহেতু মামলাটি আদালতের বিচারাধীন বিষয় তাই এই ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাই না।