নেত্রকোনা ০২:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইগাতীর গারোপল্লীতে ওয়ানগালা উৎসব অনুষ্ঠিত

  • আপডেট : ০৪:১৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২
  • ৭৬

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গারো খ্রিষ্ঠান সম্প্রদায়ের লোকেরা খ্রিস্টরাজার মহাপর্ব ও ওয়ানগালা উৎসব পালন করেছে।  ২০ নভেম্বর রবিবান উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্বরে দিনব্যাপী ওই উৎসবের আয়োজন করা হয়। গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্যদেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। নতুন ফল ও ফসল ঘরে উঠবে। তার আগে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে শস্যদেবতার প্রতি।,



তাই শস্যদেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য নেচে-গেয়ে উদযাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব। একই সঙ্গে পরিবারে ভালোবাসা, মন্ডলীর আনন্দ, সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করা হয় শস্যদেবতার কাছে।এ সম্প্রদায়ের লোকদের তথ্য মতে, গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ ওয়ানগালা(নবান্ন)। উৎসব। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে।



সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার প‚বে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। এ ছাড়া এটি ১০০ ঢোলের উৎসব নামেও পরিচিত। সবাই রঙবেরঙের পোশাক ও পাখির পারক মাথায় দিয়ে লম্বা ডিম্বাকৃতির ঢোলের তালে তালে নাচে। এই দিন হল বিনোদনের দিন। পুরুষ ও নারীরা দুইটি আলাদা সারি গঠন করে এবং নাচের তালে তালে এগিয়ে যান। সাথে থাকেমহিষের শিঙে বানানো এক ধরনের আদিম বাঁশির সুর। সকাল ৯টায় মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্বরে থক্কা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের স‚চনা করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর সহকারী পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার রব্রাট দিলীপ গোমেজ।,’



উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার বিপুল ডেভিট দাস। বক্তব্য দেন মরিয়মনগর প্যারিস কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওনারসন চাম্বুগং, আদিবাসী নেতা আলপন্স চিরান প্রমুখ। উৎসবে ক্রুশচত্বরে বাণী পাঠ (মান্দিতে), খামালকে খুথুব ও থক্কা প্রদান, জনগণকে থক্ক দেওয়া, পবিত্র খ্রিস্টযাগ, দান সংগ্রহ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা করা হয়। গারো সম্প্রদায়ের কয়েকশ মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন।,




প্রার্থনা পরিচালনা করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর সহকারী পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার রব্রাট দিলীপ গোমেজ। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারোদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়।মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার বিপুল ডেভিড দাস জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। স্বপ্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর ম‚ল লক্ষ্য। উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে বসে মেলা।’

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি।

পূর্বধলায় দলিল লিখক সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন

ঝিনাইগাতীর গারোপল্লীতে ওয়ানগালা উৎসব অনুষ্ঠিত

আপডেট : ০৪:১৮:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২

শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গারো খ্রিষ্ঠান সম্প্রদায়ের লোকেরা খ্রিস্টরাজার মহাপর্ব ও ওয়ানগালা উৎসব পালন করেছে।  ২০ নভেম্বর রবিবান উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্বরে দিনব্যাপী ওই উৎসবের আয়োজন করা হয়। গারোদের বিশ্বাস, ‘মিসি সালজং’ বা শস্যদেবতার ওপর নির্ভর করে ফসলের ভালো ফলন। নতুন ফল ও ফসল ঘরে উঠবে। তার আগে কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে শস্যদেবতার প্রতি।,



তাই শস্যদেবতাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ও নতুন ফসল খাওয়ার অনুমতির জন্য নেচে-গেয়ে উদযাপন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ওয়ানগালা উৎসব। একই সঙ্গে পরিবারে ভালোবাসা, মন্ডলীর আনন্দ, সব পরিবারের মঙ্গল কামনা করা হয় শস্যদেবতার কাছে।এ সম্প্রদায়ের লোকদের তথ্য মতে, গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ ওয়ানগালা(নবান্ন)। উৎসব। ‘ওয়ানা’ শব্দের অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী আর ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। দেবদেবীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও মনোবাসনার নানা নিবেদন হয় এ উৎসবে।



সাধারণত বর্ষার শেষে ও শীতের আগে, নতুন ফসল তোলার প‚বে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন নিষেধ থাকে এ সম্প্রদায়ের জন্য। তাই অনেকেই একে নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। এ ছাড়া এটি ১০০ ঢোলের উৎসব নামেও পরিচিত। সবাই রঙবেরঙের পোশাক ও পাখির পারক মাথায় দিয়ে লম্বা ডিম্বাকৃতির ঢোলের তালে তালে নাচে। এই দিন হল বিনোদনের দিন। পুরুষ ও নারীরা দুইটি আলাদা সারি গঠন করে এবং নাচের তালে তালে এগিয়ে যান। সাথে থাকেমহিষের শিঙে বানানো এক ধরনের আদিম বাঁশির সুর। সকাল ৯টায় মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর গির্জা চত্বরে থক্কা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানের স‚চনা করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর সহকারী পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার রব্রাট দিলীপ গোমেজ।,’



উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার বিপুল ডেভিট দাস। বক্তব্য দেন মরিয়মনগর প্যারিস কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওনারসন চাম্বুগং, আদিবাসী নেতা আলপন্স চিরান প্রমুখ। উৎসবে ক্রুশচত্বরে বাণী পাঠ (মান্দিতে), খামালকে খুথুব ও থক্কা প্রদান, জনগণকে থক্ক দেওয়া, পবিত্র খ্রিস্টযাগ, দান সংগ্রহ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রার্থনা করা হয়। গারো সম্প্রদায়ের কয়েকশ মানুষ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ প্রার্থনায় অংশ নেন।,




প্রার্থনা পরিচালনা করেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর সহকারী পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার রব্রাট দিলীপ গোমেজ। পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গারোদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়।মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত ও খামাল ফাদার বিপুল ডেভিড দাস জানান, ১৯৮৫ সাল থেকে মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ওয়ানগালা উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। স্বপ্রাচীনকাল থেকে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্ম ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরাই এর ম‚ল লক্ষ্য। উৎসব ঘিরে ধর্মপল্লীর পাশে গারোদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও শিশুদের নানা রকমের খেলনা নিয়ে বসে মেলা।’