নেত্রকোনা ০১:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজের ঝাঁঝে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ, আতঙ্কে বিক্রেতারা, পেঁয়াজশূন্য বাজার

  • আপডেট : ০৩:৩২:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৯
  • ১৯২

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া:

প্রশাসনের কড়া নজরদারী আর ভয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না কুষ্টিয়ার পৌরবাজারের আড়তদারসহ বিভিন্ন কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতারা। দাম নিয়ে প্রশাসনের ভয়ে আড়তদারেরা পেঁয়াজ আনছেন না। আড়তদারের কাছ থেকে পেঁয়াজ নিয়ে খুচরা বিক্রেতারাও বিক্রি করতে ভয় পাচ্ছে।

বিক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে পেঁয়াজ একেবারেই কম। তারপরও প্রশাসনের লোকজন এসে দাঁড়িয়ে থাকছেন। কেনা দামই পড়ছে কেজিপ্রতি ১৭০ টাকা। সেখানে ১৮০ টাকায় বিক্রি করলেও প্রশাসনের লোকজন চাপ দিচ্ছেন। তাই ভয়ে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না।

সকালে পৌরবাজার, মঙ্গলবাড়ীয় বাজার, রাজার হাটসহ শহর ও শহরতলী বিভিন্ন স্থানের হাট-বাজার ঘুরে জানা গেল, পৌরবাজারে প্রতিদিনের পেঁয়াজের চাহিদা ৫০ মণের বেশি। সেখানে ৫ থেকে ৬ জন আড়তদার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। পৌর বাজারের একমাত্র আলী ভান্ডারের আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। ওই আড়তে যৌথভাবে লিয়াকত আলী, শফিউদ্দীন ও আলাউদ্দিন তিনজন ব্যবসা করেন।
আলাউদ্দীন আমার সংবাদকে বলেন, সকাল সাতটায় বাজারের খুচরা বিক্রেতারা তাঁর আড়তে ভিড় করেন। আড়তে মাত্র ৪ বস্তায় মোট ২৪০ কেজি পুরাতন পেঁয়াজ আসে। শুক্রবার প্রতি কেজি ১৬১ টাকায় তিনি বিক্রি করছিলেন। ১০টার দিকে একজন নির্বাহী হাকিম এসে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা তাঁর কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান।

জরিমানার কাগজ দেখে জানা গেল, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ৩৮ ধারায় তাঁকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অর্থাৎ আড়তে মূল্যতালিকা টাঙানো ছিল না। তবে আলাউদ্দীন আড়তে টাঙানো তালিকা দেখিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভোর থেকেই মূল্যতালিকা টাঙানো ছিল। তবে আমার কাছে পেঁয়াজ কেনার চালান দেখতে চেয়েছিলেন, সেটা দেখাতে পারিনি।’

নির্বাহী হাকিমের তৎপরতা দেখে অনেক খুচরা বিক্রেতা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া বাজারে আর কোনো পেঁয়াজ না থাকায় বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১২টায় বাজার ঘুরে আরও দেখা গেল, সবজি বিক্রেতাদের কাছে সব ধরনের সবজি, রসুন, আদা থাকলেও পেঁয়াজের ডালা খালি। শনিবার সকালে মঙ্গলবাড়ীয় বাজারে এক খুচরা ব্যবসায়ীকে পেঁয়াজ বিক্রির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেঁয়াজ বিক্রি করে বিপদে পরবো নাকি। বিপদ থেকে বাঁচার জন্য পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খুচরা বিক্রেতা বলেন, প্রশাসনের চাপাচাপির কারণে কেউ ঝুঁকি নিচ্ছে না। পুরাতন পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছিল। নতুন পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ আমদানিও নেই।

একজন বিক্রেতা বলেন, বৃহস্পতিবার কেজিপ্রতি ১৪০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে যেটুকু পেঁয়াজ পেয়েছিলেন, সেটার দাম পড়ছিল ১৭০ টাকা। বেশি দামে বিক্রি করলে প্রশাসন জরিমানা করতে পারে, এ জন্য ঝুঁকি না নিয়ে বিক্রি করছেন না। শনিবারতো ভয়ে বাজারে পেঁয়াজ কেউ আনছে না।
দুপুরে খুচরা বাজার ঘুরে মাত্র একজনের কাছে দুই কেজি পেঁয়াজের দেখা মেলল, সেটার মান ভালো না। বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কিনে কোনো বিক্রেতাই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না। বরং পেঁয়াজ বাদ দিয়ে অন্য পণ্য বিক্রি করা ভালো। এতে ঝামেলামুক্ত থাকা যাচ্ছে।

জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, আজ বাজারে পেঁয়াজ খুবই কম ছিল। যেটুকু ছিল সেটা শেষ হয়ে যায়। তবে সমস্যা নেই, সন্ধ্যার মধ্যে বাজারে পেঁয়াজ ঢুকবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। আমাদের প্রকাশনা “পূর্বকন্ঠ” স্বাধীনতার চেতনায় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় অনলাইন । পাঠক আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা। পূর্বকণ্ঠ কথা বলে বাঙালির আত্মপ্রত্যয়ী আহ্বান ও ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার। কথা বলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে। ছড়িয়ে দিতে এ চেতনা দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে। আমরা রাষ্ট্রের আইন কানুন, রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী এবং বাঙ্গালীর আবহমান কালের সামাজিক সহনশীলতার বিপক্ষে পূর্বকন্ঠ কখনো সংবাদ প্রকাশ করে না। আমরা সকল ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন ধর্মমত বা তাদের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আমরা কিছু প্রকাশ করি না। আমাদের সকল প্রচেষ্টা পাঠকের সংবাদ চাহিদাকে কেন্দ্র করে। তাই পাঠকের যে কোনো মতামত আমরা সাদরে গ্রহন করব।
জনপ্রিয়

পূর্বধলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের দাফন সম্পন্ন

কুষ্টিয়ায় পেঁয়াজের ঝাঁঝে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ, আতঙ্কে বিক্রেতারা, পেঁয়াজশূন্য বাজার

আপডেট : ০৩:৩২:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৯

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া:

প্রশাসনের কড়া নজরদারী আর ভয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না কুষ্টিয়ার পৌরবাজারের আড়তদারসহ বিভিন্ন কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতারা। দাম নিয়ে প্রশাসনের ভয়ে আড়তদারেরা পেঁয়াজ আনছেন না। আড়তদারের কাছ থেকে পেঁয়াজ নিয়ে খুচরা বিক্রেতারাও বিক্রি করতে ভয় পাচ্ছে।

বিক্রেতাদের অভিযোগ, বাজারে পেঁয়াজ একেবারেই কম। তারপরও প্রশাসনের লোকজন এসে দাঁড়িয়ে থাকছেন। কেনা দামই পড়ছে কেজিপ্রতি ১৭০ টাকা। সেখানে ১৮০ টাকায় বিক্রি করলেও প্রশাসনের লোকজন চাপ দিচ্ছেন। তাই ভয়ে কেউ পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না।

সকালে পৌরবাজার, মঙ্গলবাড়ীয় বাজার, রাজার হাটসহ শহর ও শহরতলী বিভিন্ন স্থানের হাট-বাজার ঘুরে জানা গেল, পৌরবাজারে প্রতিদিনের পেঁয়াজের চাহিদা ৫০ মণের বেশি। সেখানে ৫ থেকে ৬ জন আড়তদার খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। পৌর বাজারের একমাত্র আলী ভান্ডারের আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হয়। ওই আড়তে যৌথভাবে লিয়াকত আলী, শফিউদ্দীন ও আলাউদ্দিন তিনজন ব্যবসা করেন।
আলাউদ্দীন আমার সংবাদকে বলেন, সকাল সাতটায় বাজারের খুচরা বিক্রেতারা তাঁর আড়তে ভিড় করেন। আড়তে মাত্র ৪ বস্তায় মোট ২৪০ কেজি পুরাতন পেঁয়াজ আসে। শুক্রবার প্রতি কেজি ১৬১ টাকায় তিনি বিক্রি করছিলেন। ১০টার দিকে একজন নির্বাহী হাকিম এসে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন। কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা তাঁর কাছ থেকে পেঁয়াজ কিনে নিয়ে যান।

জরিমানার কাগজ দেখে জানা গেল, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে ৩৮ ধারায় তাঁকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অর্থাৎ আড়তে মূল্যতালিকা টাঙানো ছিল না। তবে আলাউদ্দীন আড়তে টাঙানো তালিকা দেখিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভোর থেকেই মূল্যতালিকা টাঙানো ছিল। তবে আমার কাছে পেঁয়াজ কেনার চালান দেখতে চেয়েছিলেন, সেটা দেখাতে পারিনি।’

নির্বাহী হাকিমের তৎপরতা দেখে অনেক খুচরা বিক্রেতা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া বাজারে আর কোনো পেঁয়াজ না থাকায় বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর ১২টায় বাজার ঘুরে আরও দেখা গেল, সবজি বিক্রেতাদের কাছে সব ধরনের সবজি, রসুন, আদা থাকলেও পেঁয়াজের ডালা খালি। শনিবার সকালে মঙ্গলবাড়ীয় বাজারে এক খুচরা ব্যবসায়ীকে পেঁয়াজ বিক্রির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পেঁয়াজ বিক্রি করে বিপদে পরবো নাকি। বিপদ থেকে বাঁচার জন্য পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ রেখেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খুচরা বিক্রেতা বলেন, প্রশাসনের চাপাচাপির কারণে কেউ ঝুঁকি নিচ্ছে না। পুরাতন পেঁয়াজ ১৭০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছিল। নতুন পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি। পেঁয়াজ আমদানিও নেই।

একজন বিক্রেতা বলেন, বৃহস্পতিবার কেজিপ্রতি ১৪০ টাকায় বিক্রি করেছিলেন তিনি। শুক্রবার সকালে যেটুকু পেঁয়াজ পেয়েছিলেন, সেটার দাম পড়ছিল ১৭০ টাকা। বেশি দামে বিক্রি করলে প্রশাসন জরিমানা করতে পারে, এ জন্য ঝুঁকি না নিয়ে বিক্রি করছেন না। শনিবারতো ভয়ে বাজারে পেঁয়াজ কেউ আনছে না।
দুপুরে খুচরা বাজার ঘুরে মাত্র একজনের কাছে দুই কেজি পেঁয়াজের দেখা মেলল, সেটার মান ভালো না। বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে কিনে কোনো বিক্রেতাই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না। বরং পেঁয়াজ বাদ দিয়ে অন্য পণ্য বিক্রি করা ভালো। এতে ঝামেলামুক্ত থাকা যাচ্ছে।

জেলা বাজার মনিটরিং কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, আজ বাজারে পেঁয়াজ খুবই কম ছিল। যেটুকু ছিল সেটা শেষ হয়ে যায়। তবে সমস্যা নেই, সন্ধ্যার মধ্যে বাজারে পেঁয়াজ ঢুকবে।