কুষ্টিয়ার প্রায় এক হাজার মেট্রিক টন সরকারি চাল অস্তিত্বহীন অর্ধশতাধিক মিলের নামে ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে জেলার খাদ্য বিভাগ। মিল-চাতাল কিছুই নেই, কিন্তু বরাদ্দপত্রে এসব মিলের নাম এসেছে। অস্তিত্বহীন মিলের নামে ভুয়া বরাদ্দ দেয়ার ঘটনায় জেলাজুড়ে চলছে তোলপাড়। মিলারদের অভিযোগ প্রতিবারই ভৌতিক অস্তিত্বহীন মিলের নামে হাজার হাজার টন চালের ভুয়া বরাদ্দ দেয়া হয়। এবারও ক্রয় তালিকায় শুধুমাত্র সদর উপজেলায় অস্তিত্বহীন দুই অটো রাইস মিলসহ ৩৮ হাসকিং মিলের নাম অন্তভুক্ত করেছে খাদ্য বিভাগ। জেলার কয়েকজন অটো চালকল মালিকের সাথে যোগসাজস করে এসব অপকর্মে করে আসছে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। অভিযোগ উঠেছে একই ব্যক্তি খাদ্য বিভাগ থেকে তিন থেকে চারটি করে মিলের লাইসেন্স নিয়ে পুরো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছে।
কুষ্টিয়া জেলা অটো চালকল মালিক সমিতির একাংশের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, কিছুটা সমস্যাতো হয়েছেই। সেটা আমরা দেখেছি এবং শুনছি। তবে আমি কোন অনিয়মের পক্ষে নয়। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।
মিলারদের অভিযোগ, শুধুমাত্র সদর উপজেলার আমন চাল ক্রয়ে তালিকাভুক্ত ৩৫২ হাসকিং মিলের মধ্যে ৩৮ মিলের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এসব মিলের অনুকুলে ৫ থেকে ৯ টন পর্যন্ত চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৪৩ অটো রাইস মিলের মধ্যে ২টি মিলের কোন অস্তিত্ব নেই। মিল দুইটি হলো ইফাদ-২ অটো রাইস মিল এবং মিয়া ভাই রাইস মিল। এই দুই মিলের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে প্রায় ৪শ’ মেট্রিক টন চাল। এছাড়া অস্তিত্বহীন হাসকিং মিলের মধ্যে রয়েছে খাজানগর এলাকার সোনালী রাইস মিল, রুপালী রাইস মিল, রাজধানী রাইস মিল, আলখাজা রাইস মিল, খাজানগর মা রাইস মিল, ছালাম রাইস মিল, রশিদ প্রধান রাইস মিল এবং আইলচারা এলাকার খান রাইস মিল, গোল্ডেন রাইস মিল, সুবর্ণা রাইস মিল, বিসমিল্লাহ রাইস মিল, হাজী আব্দুল করিম রাইস মিল। বল্লভপুর এলাকার চাষী ভান্ডার রাইস মিল, জসিম রাইস মিল ও সিয়াম রাইস মিল। মহিষাডাঙ্গার মুন্সি রাইস মিল, মামুন শামীম রাইস মিল, কবুরহাটের কদমতলা রাইস মিল, ছালমা রাইস মিল, বারী রাইস মিল, সনি রাইস মিল ও কিরণ মন্ডল রাইস মিল, জুগিয়া বারখাদা এলাকার উত্তরা রাইস মিল, কমলাপুরের ভাই ভাই রাইস মিল ও ভাদালিয়া এলাকার মৃর্ধা রাইস মিল। এছাড়া জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও ১২ থেকে ১৫টি অস্তিত্বহীন মিল রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এসব মিলের মধ্যে বেশিভাগ মিলের তারা নামই শুনেননি। তবে কয়েকটি মিল আগে থাকলেও বর্তমানে তারা মিল বন্ধ করে অন্য ব্যবসা করছে। আবার অনেকে মিল অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। খাজানগর এলাকার বাসিন্দা আয়াকুব আলী বলেন, আগের মতো আর চাতালের ব্যবসা নেই। লোকসান দিতে দিতে অনেক মিল মালিক দেউলিয়া হয়ে গেছে। তারা চাতাল-মিল বিক্রি করে অন্য ব্যবসা করছে। সেসব জায়গায় এখন আর মিল নাই। আর অধিকাংশ মিলের অস্তিত্ব খাজানগরে কোন দিন ছিল না, এখনো নেই।
কুষ্টিয়া জেলা অটো চালকল মালিক সমিতির অপর অংশের সভাপতি সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, আমরা বেসরকারি লোক। কার মিল আছে, কার নাই এসব তদন্ত করে বের করার ক্ষমতা আমাদের নেই। খাদ্য বিভাগ বলতে পারবেন কোন মিল বাস্তবে আছে, আর কোনটি নেই। কারণ তারা মিলের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। দেখভাল করার দায়িত্বও তাদের। তবে তিনি স্বীকার করেন তালিকায় দুইটি অটো মিলের নাম আছে। পরে সবাই বসে ওই দুই মিলের নামে চালের বরাদ্দ বাতিল করে সব মিলের নামে ভাগ করে দেয়া হয়েছে।
ফোর ষ্টার রাইস মিলের মালিক মফিজুল ইসলাম জানান, অনেক মিলই বন্ধ হয়ে আছে আবার অনেকে মিল বিক্রি করে দিয়েছে। সেসব জায়গায় এখন আর মিল নাই। এমন কিছু ঘটনা আছে। তবে এগুলো নিয়ে কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন।
জেলা খাদ্য অফিস সুত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়ার চালকল মালিকদের কাছ থেকে এবার ১৩ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন আমন সিদ্ধ চাল এবং ১হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল ক্রয়ের অনুমোদন পেয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ। জেলার লাইসেন্স প্রাপ্ত ৬শ’ অটো-মেজর এবং হাসকিং মিল মালিকদের কাছ থেকে সিদ্ধ চাল ৩৬টাকা ও আতপ চাল ৩৫ টাকা কেজি দরে ক্রয় করা হবে। এরমধ্যে বিভাজন করে শুধুমাত্র কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ৩৯৫ মিলের অনুকুলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল। সদর উপজেলায় বরাদ্দের মধ্যে ৪৪টি অটো রাইস মিল এবং ৩৫২টি হাসকিং মিল তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বাঁকি ৪ হাজার মেট্রিক টন চাল জেলার ৫ উপজেলার মিলারদের কাছ থেকে ক্রয় করা হবে।
এসব অভিযোগ স্বীকার করে কুষ্টিয়া জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের কাছেও একাধিক অভিযোগ এসেছে। তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বরাদ্দ বাতিল করা হবে এবং এসব মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।