নেত্রকোনা ০১:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলমাকান্দায় বেড়ি বাঁধ নির্মানের ফলে রক্ষা পেলো ১৯ গ্রামের কৃষি জমি

একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলার ১৯টি গ্রামের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আকস্মিক পাহাড়ী ঢল আর বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। কলমাকান্দা উপজেলার গোমাই নদীর তীরবর্তী হীরাকান্দি থেকে আমবাড়ি বাজার ও রানীগাও হয়ে সারারকোনা পর্যন্ত বেড়িবাঁধটি নির্মাণের পূর্বে অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকত এই ফসলি জমি। প্রতিবছর ফসল হারিয়ে অনেক কৃষক কষ্টে দিনাতিপাত করতেন এ অঞ্চলের মানুষ। আজ তারা নিশ্চিন্ত মনে তাদের কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার সকল মানুষের মুখে ফুটেছে হাঁসি।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা ইউনিয়ন ও বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ও বাউশী ইউনিয়ন। এই তিন ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের পাশেই রয়েছে মান্দুয়া, পেটুয়া ও বাঈর নামে তিনটি বিল। যেখানে রয়েছে নয় শত ৭০ হেক্টর আবাদযোগ্য উর্বর জমি। অথচ অধিকাংশ সময় বন্যার ফলে কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত বোরো সহ অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হতেন। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-জাইকা (২য় পর্যায়) দশধর-রানীগাও পাবসস লি. সমবায়ের মাধ্যমে এক কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ১০ কিলোমিটার এই বেড়ি বাঁধটি পুনঃনির্মাণ করে।

দশধার, রানীগাঁও, হীরাকান্দা, পাইকপাড়া, সাতপাইকেরভিটা, সারারকোনা সহ মোট ১৯টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস এই বেড়িবাঁধটির চারদিকে। এ বেড়িবাঁধটি নির্মাণের ফলে বন্যার হাত থেকে যেমন ফসলি জমি রক্ষা পেয়েছে, ঠিক তেমনি বাঁধের উপর দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুল-কলেজে যেতে পারছে। রোগীদের সহজে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে এই বেড়িবাঁধটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। জীবন যাপনে স্বাচ্ছন্দ্যতার ফিরে এসেছে।

এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতবছরের বন্যায় বাঁধের কিছু কিছু অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় বাঁধটি কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। যদি এই কিছু কিছু অংশ মেরামত করে দেয়া হয় তবে বিগত বছরের মতো আগামীতেও কৃষকরা নিশ্চিন্তে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

দশধর-রানীগাও পাবসস লি. সমবায়ের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার নন্দী দেশ রূপান্তরকে জানান, ”২০১৪ সালে পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় গোমই নদীর তীরবর্তী বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এলাকার কৃষকেরা ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ মুঠো ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। ২০১৯ সালে বেঁড়িবাধ নির্মানের ফলে কৃষকদের আগাম বন্যায় ধানের ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে নাই। এজন্য স্থানীয় সাংসদ মানু মজুমদার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের সহযোগিতায় এ প্রকল্পের অনুমোদন পেতে সময় কম লেগেছে। তারা দু’জনই সর্বদাই বাঁধের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এবারের বর্ষা ও পাহাড়ী ঢলে এই বাঁধটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং তা সমিতির লোকজন মেরামতের কাজ চলমান রেখেছে।”

নেত্রকোনা এলজিইডি এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জাইকা (২য় পর্যায়) এর অর্থায়নে ও স্থানীয় এলজিইডির বাস্তবায়নে বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ কিলোমিটার এই বাঁধটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। এর ফলে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলার ১৯টি গ্রামের কৃষি জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। বাঁধ দ্বারা চারদিকে রিং এর মতো হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে মৎস্য চাষের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যোগাযোগ সহ আর্থসামাজিক উনয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে এই বাঁধটি।”

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি।
জনপ্রিয়

পূর্বধলায় বণিক সমিতির সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতবিনিময়

কলমাকান্দায় বেড়ি বাঁধ নির্মানের ফলে রক্ষা পেলো ১৯ গ্রামের কৃষি জমি

আপডেট : ১০:৪৯:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে নেত্রকোনার কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলার ১৯টি গ্রামের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আকস্মিক পাহাড়ী ঢল আর বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। কলমাকান্দা উপজেলার গোমাই নদীর তীরবর্তী হীরাকান্দি থেকে আমবাড়ি বাজার ও রানীগাও হয়ে সারারকোনা পর্যন্ত বেড়িবাঁধটি নির্মাণের পূর্বে অধিকাংশ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকত এই ফসলি জমি। প্রতিবছর ফসল হারিয়ে অনেক কৃষক কষ্টে দিনাতিপাত করতেন এ অঞ্চলের মানুষ। আজ তারা নিশ্চিন্ত মনে তাদের কৃষিকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার সকল মানুষের মুখে ফুটেছে হাঁসি।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার পোগলা ইউনিয়ন ও বারহাট্টা উপজেলার রায়পুর ও বাউশী ইউনিয়ন। এই তিন ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামের পাশেই রয়েছে মান্দুয়া, পেটুয়া ও বাঈর নামে তিনটি বিল। যেখানে রয়েছে নয় শত ৭০ হেক্টর আবাদযোগ্য উর্বর জমি। অথচ অধিকাংশ সময় বন্যার ফলে কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত বোরো সহ অন্যান্য ফসল ঘরে তুলতে ব্যর্থ হতেন। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প-জাইকা (২য় পর্যায়) দশধর-রানীগাও পাবসস লি. সমবায়ের মাধ্যমে এক কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা ব্যায়ে ১০ কিলোমিটার এই বেড়ি বাঁধটি পুনঃনির্মাণ করে।

দশধার, রানীগাঁও, হীরাকান্দা, পাইকপাড়া, সাতপাইকেরভিটা, সারারকোনা সহ মোট ১৯টি গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসবাস এই বেড়িবাঁধটির চারদিকে। এ বেড়িবাঁধটি নির্মাণের ফলে বন্যার হাত থেকে যেমন ফসলি জমি রক্ষা পেয়েছে, ঠিক তেমনি বাঁধের উপর দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুল-কলেজে যেতে পারছে। রোগীদের সহজে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে এই বেড়িবাঁধটি বিশেষ ভূমিকা রাখছে। জীবন যাপনে স্বাচ্ছন্দ্যতার ফিরে এসেছে।

এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গতবছরের বন্যায় বাঁধের কিছু কিছু অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় বাঁধটি কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। যদি এই কিছু কিছু অংশ মেরামত করে দেয়া হয় তবে বিগত বছরের মতো আগামীতেও কৃষকরা নিশ্চিন্তে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।

দশধর-রানীগাও পাবসস লি. সমবায়ের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার নন্দী দেশ রূপান্তরকে জানান, ”২০১৪ সালে পাহাড়ী ঢল ও বন্যায় গোমই নদীর তীরবর্তী বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এলাকার কৃষকেরা ২০১৮ সাল পর্যন্ত এ মুঠো ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। ২০১৯ সালে বেঁড়িবাধ নির্মানের ফলে কৃষকদের আগাম বন্যায় ধানের ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে নাই। এজন্য স্থানীয় সাংসদ মানু মজুমদার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের সহযোগিতায় এ প্রকল্পের অনুমোদন পেতে সময় কম লেগেছে। তারা দু’জনই সর্বদাই বাঁধের খোঁজখবর নিচ্ছেন। এবারের বর্ষা ও পাহাড়ী ঢলে এই বাঁধটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং তা সমিতির লোকজন মেরামতের কাজ চলমান রেখেছে।”

নেত্রকোনা এলজিইডি এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জাইকা (২য় পর্যায়) এর অর্থায়নে ও স্থানীয় এলজিইডির বাস্তবায়নে বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১০ কিলোমিটার এই বাঁধটি পুনঃনির্মাণ করা হয়। এর ফলে দুর্গাপুর, কলমাকান্দা ও বারহাট্টা উপজেলার ১৯টি গ্রামের কৃষি জমি বন্যার কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। বাঁধ দ্বারা চারদিকে রিং এর মতো হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে মৎস্য চাষের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যোগাযোগ সহ আর্থসামাজিক উনয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে এই বাঁধটি।”