গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
প্রেমিকাকে নিয়ে উধাও হওয়ার দু’দিন পর বাড়ির পেছনে কাঁঠাল গাছ থেকে হৃদয় চন্দ্র ঘোষ (২২) নামে স্থানীয় এক যুবকের ফাঁসিতে ঝুলন্ত মহদেহ উদ্ধার করেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুর থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সকাল ৯টার দিকে গৌরীপুর পৌরসভার ঘোষপাড়া এলাকা থেকে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। হৃদয় চন্দ্র ঘোষ ঘোষপাড়া এলাকার মৃত অজিত চন্দ্রের একমাত্র ছেলে। নিহত যুবকের পরিবারের লোকজনের দাবি এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
হৃদয় চন্দ্রের চাচাতো ভাই মানিক চন্দ্র ঘোষ জানান, প্রতিবেশী ছফির উদ্দিনের মেয়ে পপি আক্তারের (১৮) সাথে হৃদয়ের প্রায় চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। দু’জন ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় তাদের এ সম্পর্ক কেউ মেনে নিতে চাননি। তাই প্রেমের টানে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে তারা দু’জন বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে গাজীপুর জেলার মাওনার ভবানীপুর এলাকায় পপির এক প্রতিবেশী আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠে। তাদের অবস্থানের জায়গাটি সনাক্ত করার পর পপির বাবা ছফির উদ্দিনসহ তার পরিবারের অন্য সদস্যরা বুধবার ভবানীপুর এলাকায় তাদেরকে খুঁজে বের করেন।
মানিক চন্দ্র আরো জানান, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টার দিকে হৃদয় তাকে (মানিককে) ফোন করেন বলেন সে খুব ঝামেলায় আছে। এই বলে ফোন কেটে দেন হৃদয়।
হৃদয়ের অপর চাচাতো ভাই গোপাল চন্দ্র ঘোষ জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে হৃদয় তাকে ফোন দিয়ে বলে ভবানীপুরে পপির পরিবারের লোকজন গন্ডগোল করছেন। এই বলে ফোন কেটে দেয়। এরপর হৃদয়কে একাধিকবার কল করা হলেও অপর প্রান্ত থেকে কেউ রিসিভ করেননি।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬ টার সময় হৃদয়ের মা রীনা রানী ষোষ নিজ ঘরের পেছনে ছোট একটি কাঁঠাল গাছে চিকন ডালের সাথে গলায় ওড়না পেছানো একমাত্র ছেলের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পান। এসময় ঘটনাস্থলে দু’জোড়া স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। রীনা রানি ঘোষের দাবি তার ছেলেকে হত্যার পর মরদেহ পরিকল্পিতভাবে গাছে ঝুলিয়ে রাখেন পপির পরিবারের লোকজন।
স্থানীয় লোকজন জানান, ঘটনার পর থেকে ছফির উদ্দিনসহ তার পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যরা আত্মগোপন করেন।
এ ঘটনায় মন্তব্য জানতে ঘটনারদিন দুপুরে ছফির উদ্দিনের বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
গৌরীপুর থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম মাওলা জানান, ঘটনারদিন খবর পেয়ে সকাল ৯ টায় ঘটনাস্থল থেকে হৃদয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করা হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে একটি ওড়না ও দু’জোড়া স্যান্ডেল জব্দ করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, পপিকে পুলিশের হেফাজতে থানায় রাখা হয়েছে। এসময় থানায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কের কথা স্বীকার করে পপি বলেন, প্রেমের টানে তারা দু’জন বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। পরে তাদের অবস্থান জানতে পেরে বুধবার রাতে ভবানীপুর এলাকা থেকে পপিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার বাবা ছফির উদ্দিন। এসময় হৃদয় তাদের সাথে আসেনি।