
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর নবুওত প্রাপ্তিকে লাভজনক ব্যবসা মনে করে অনেক প্রতারক নিজেদেরকে তৎকালীন সময়ে নবী বলে দাবি করেছিল। সমকালীন আরবে এদেরকে ভন্ডনবী বলা হতো-এখনো ইসলামের ইতিহাসে এরা ভন্ডনবী নামেই পরিচিত।
মহানবী সাঃ জীবদ্দশায় এরা খুব সুবিধা করতে না পারলেও খোলাফায়ে রাশেদীনের ১ম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাঃ এর সময়ে ব্যাপকভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে রাজ্যময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল।
কিন্তু আবু বকর রাঃ এদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করে এদের পরাজিত করে বিতারিত করে আরবে শান্তি প্রতিষ্টা করেছিলেন।ফলে ইসলামের প্রতিষ্টা, প্রচার ও প্রসার ঘটেছিলো।
আজ বাংলাদেশেও একদল ভন্ড ব্যক্তিবর্গ পৃথিবীর শ্রেষ্ট ধর্ম ইসলামের নামে নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। গত বেশ কিছুদিন যাবত ইসলামী মাহফিলকে পুজি করে এই সমস্ত ব্যক্তিবর্গ দেশব্যাপী রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এতে করে জনমনে যেমন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি দেশব্যাপী আতংক বিরাজ করছে।
এরইমধ্যে গত কালকের লজ্জাজনক ঘটনাটিকে মিথ্যা প্রমানীত করা এবং সরকারের উপর দায় ছাপানোর চেষ্টায় মাঠে তৎপর হয়ে উঠেছে তাদের অনুসারীরা। একজন স্বামী/স্ত্রী্র নিরাপদ আশ্রম হচ্ছে তার বসতবাড়ি – তবে হ্যা,মানষিক শান্তির জন্য ঘুরতে যাওয়া দোষের নয় কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে হোটেলে অবস্থানকে নিয়ে।
সেইসাথে পরবর্তী মোবাইল ফোনালাপটি বিষয়টিকে পরিষ্কার করেছে।তাই এটি গুজব বা সৃষ্ট এরকম বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা দুঃখজনক। এটিই সত্য যে মামুনুল হক ২য় বিবাহ করেছেন,-সেটিও প্রশ্ন আসতো না,যদি তিনারা রিসোর্টে না যেতেন।
যাক-আজ বেশ কিছুদিন যাবত লক্ষনীয়ভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে,ইসলামের নামে মাহফিলে বক্তাগন এসেই বক্তৃতার সর্বাংশেই যা বলেন-তাহচ্ছে রাজনৈতিক কথাবার্তা -যা ইসলামি মাহফিলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
আমরা যারা ইসলামি চিন্তায় অনভিজ্ঞ – আমরা অবশ্যই কোরআন, হাদীসের ব্যাখা শুনতে চাই, কিন্তু ইসলামের মাহফিল থেকে যখন রাজনৈতিক সমাবেশের বক্তব্য প্রচার হতে থাকে তখন ভন্ডনবীদের উত্থানের কথাই মনে পড়ে যায়।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জনগন হতাশ হয়ে সভাস্থলে সমাগম কমিয়ে দিলেও –রাষ্ট্রের উদারতা রাষ্ট্র কাঠামোকে প্রশ্নবিদ্ব করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার আজ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকেও এই সমস্ত ভন্ড প্রতারক চক্রের প্রচারনা বন্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
আজ প্রায় ১২বৎসর এই দলটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দ্বৈনতায় ভুগছে -সাংগঠনিক তৎপরতা একেবারেই কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফলে দেশব্যাপী যে নৈরাজ্য আর অপ্রচার চলছে তা প্রতিরোধ বা প্রতিহত করার মতো কোন উদ্যোগই নেই শাসক দলের মধ্যে।
একাধিক বার ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। মনে হচ্ছে ক্ষমতাসীন নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রীয় কাজেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন – এটি একটি দলীয় সরকারের উদাসীনতা এবং আত্থঅহংকারকে দৃশ্যমান করছে। যা নিশ্চিত পতনকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
এইরকম পরিবেশে রাষ্ট্র নাগরিকের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই প্রতিয়মান হচ্ছে। সারাদেশ ব্যাপী ভন্ড প্রতারকের হুংকারে আতংকিত গোটা জাতি। এই অবস্হা চলতে দেওয়া যেতে পারে না – এই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে-যা পবিত্র ইসলাম ধর্মেও বলা হয়েছে।
তাহলে কেন দেশব্যাপী এরকম নৈরাজ্য আর অরাজকতা ? সুতরাং সরকার দলকে সাংগঠনিক ভাবে সংকট মোকাবেলা করে এই সমস্ত ভন্ড প্রতারকদের আসল চরিত্র জনসমক্ষে উন্মোচিত করতে হবে। যদি সরকার দলীয় এমপি,চেয়ারম্যান সাহেবগন মাঠে এসে এই মুহূর্তে লাগাম টেনে না ধরেন -তাহলে হয়তোবা সামপ্রদায়িকতা রোধ কঠিন হয়ে পড়বে।
তাই শান্তির ধর্ম পবিত্র ইসলামের অনুশাসন পালনে সতর্কতা অবলম্বন করেই ভন্ডামীর অবসান ঘটাতে হবে।এটিই বর্তমান উন্নয়নের যাত্রায় বাংলাদেশের প্রত্যাশা।
লেখকঃ মোঃ এমদাদুল হক,প্রভাষক ইতিহাস বিভাগ,পূর্বধলা সরকারি কলেজ।
বিঃদ্রঃ- মতামত বা মুক্ত মত প্রকাশের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়।

আপনার মতামত লিখুন :