হঠাৎ করে বাজারে প্রচার হয় প্রশাসনের চাপে মিলাররা চালের কেজি প্রতি ২টাকা কমিয়েছেন। কিন্তু বাজারে তার বাস্তবতা নেই অভিযোগ ক্রেতা/ভোক্তাদের। চালের দাম এক টাকাও কমেনি দাবি পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের। ধানের বাজার দর ধ্বস করতেই এটি নতুন ষড়যন্ত্র মিলারদের অভিযোগ কৃষকের। প্রশাসনের চাপে নয়; চাল সরবরাহে মন্দার কারণে মিল চালু রাখার স্বার্থে চালের দাম কেজি প্রতি ২টাকা কমানো হয়েছে। পরষ্পর বিরোধী ক্ষোভ নিরসনে সরকারী নীতিমালা প্রনয়ণ ও তার বাস্তবায়ন জরুরী দাবি মেজর অটো ও হাস্কিং রাইস মিল মালিক সমিতির।
কুষ্টিয়া শহরের আমলাপাড়া এলাকার হাজি গোলাম মহসিন বলেন, দুইদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম চালের দাম মিলাররা কেজিতে দুই টাকা কমিয়েছে, কিন্তু বাজারে তো দেখি যা ছিলো তাই আছে। এসবের মানে কি ? দেখার কি কেউ নাই ?
কুষ্টিয়া পৌর বাজারে খুচরা চাল বিক্রেতা বাবুল আকতার বলেন, চালের দাম কোমছে, আপনারা এসব সংবাদ কোথায় পান। আমরা মিলারদের কাছ থেকে যে দামে চাউল ক্রয় করি, তাতে কেজিতে মাত্র ১টাকা লাভ করে বিক্রী করছি। মিলাররা যদি দাম কোমিয়ে থাকে তাহলে সেখানে গিয়েই চাল কিনুন’। খুচরা বাজারে মিনিকেট চাইলের দাম এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ৪৯/৫০ টাকা ছিলো এখনও তাই আছে।
কুষ্টিয়া বড়বাজারের পাইকার/আড়তদার আলী নেয়াজ বলেন, গত মাসের(নভেম্বর) প্রথম সপ্তায় মিলগেটে মিনিকেট চাল একলাফে ৪০/৪২ টাকা থেকে বৃদ্ধি পায়ে ৪৬টাকা হয়ে যায়; এই দামের কোন হেরফের এখনও হয়নি। মিলাররা সাংবাদিকের কাছে চালের দাম কমানোর কথা বললে তো হবে না। আড়তে কম রেটে চাল আসলেই আমরা বুঝবো চালের দাম কমেছে।
সদর উপজেলার হররা গ্রামের কৃষক আলীম সেখ মাঠে কাটা ধান মহিষ গাড়ীতে বোঝায় করছিলেন। এসময় সাংবাদিককে কাছে যেতে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। তিনি বলেন, আপনারা আবার কি মতলবে এখানে এসেছেন ? আপনারা তো অটো মিল আলারে খবর ল্যাকেন, ধানের দাম, চালিরদাম ইচ্চা মোতো বাদি দেয়। আপনারা সরকারকে বোলেন চাষির দিক ইকটু তাকাইক। না হলি আমরা মরি সাইরি যাচ্ছি। আর দুই একদিনির ভিতরি চাষিরা পুরাদোমে ধান বেচপি, আবার শুনতিচি মিল আলারা চালির দাম কুমা দেচে, আমার মনে হচ্চে উরা এই কতা প্রচার করি ধানের দাম কুমা দিতি চাই। বাজারে চালির দাম তো একনও হাই। ধানের দাম যা ছিলো তাও কুমা ফ্যালার পায়তারা করতেচে। একমন ধান ৫শ থেকে ৬শ টাকায় বেচতি হলি চাষিরা আর ধানই লাগানি বন্ধ করি অন্যকিছুত চইলি যাবি’।
মিলগেটে চালের দাম কেজিতে ২টাকা কমানো হয়েছে মিলারদের এই দাবি বিষয়ে কুষ্টিয়া খাজানগর চালের মোকামে দাদা রাইস মিলের মালিক ও মেজর অটো ও হাস্কিং রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন বলেন, আমাদের মোকামে প্রতিদিনের উৎপাদিত ১২হাজার মে:টন চালের সরবরাহ অর্ডার না পাওয়ায় মিল চালু রাখার স্বার্থে আমরা বাধ্য হয়ে কেজি প্রতি ২টাকা কমিয়েছি। তবুও পাইকারদের কাছ থেকে তেমন সারা পাচ্ছি না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মিলই বন্ধ হয়ে যাবে। মিল গেটে চালের দাম কমালেও বাজারে খুচরা ও ভোক্তা পর্যায়ে এর কোন প্রভাব পড়েনি বিষয়ে তিনি বলেন, গত মাসের প্রথম দিকে মিলগেটে সব রকম চিকন(মিনিকেট) চালের দাম কেজি প্রতি ৫/৬ টাকা বৃদ্ধির প্রবনতা দেখে অধিকাংশ পাইকার ও আড়তাদাররা প্রয়োজনের অধিক চাল কিনে গুদাম ভরেছে। বেশীদামে কেনা ওইসব চাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা দাম কমালেও প্রকৃত অর্থে খুচরা বাজার বা ভোক্তা পর্যায়ের এর প্রভাব পড়েনি।
আরও অন্তত: ৭ থেকে ১০দিন পর খুচরা বাজারে দাম কমবে। তবে এখানে বাজার মনিটরিংএ দুর্বলতা আছে। ধান ও চালের দাম নিয়ন্ত্রন মিলারদের হাতে চাষিদের এমন অভিযোগ নাকচ করে এই নেতা বলেন, এসব নিয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ না দিয়ে বরং সরকার সব পক্ষের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে একটা কঠোর নীতিমালা করুক। ধান উৎপাদনের খরচ, চাল উৎপাদনের খরচ, পরিবহন খরচ আমলে নিয়ে সরকারের খাদ্য বিভাগই সঠিক দাম নির্ধারন এবং তার বাস্তবায়ন করুন। আমরা কখনই চাই না কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হোক, কারন ওরাই আমাদের কাঁচামালের মূল উৎস।
চালের দাম কেজিতে ২টাকা কমেছে মিলারদের দাবির কোন বাস্তবতা বা সতত্যা খুচরা ও পাইকারি বাজারে নেই নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেলা বাজার কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, বাজার মনিটরিংএ দুর্বলতার অভিযোগ সঠিক নয়; আমরা প্রতিদিনই জাতীয় ভোক্তা অধিকার ও প্রশাসনের সমন্বয়ে অভিযান চালাচ্ছি।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, এখন নতুন ধান উঠছে, স্বাভাবিক ভাবেই চালের দাম কিছুটা কমে আসবে। চালের দাম মিলাররা কমানোর প্রচার চালিয়ে ধানের দামে ধ্বস নামানোর চেষ্টা হচ্ছে; কৃষকদের এই আশংকা করার কারন নেই। কৃষকরা যাতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রয় করতে পারেন তার প্রয়োজনীয় উদ্যেগ জেলা প্রশাসন গ্রহন করবে।