নেত্রকোনা ০৭:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনায় আগ্রাসী শিক্ষার দৈন্যদশায় করনীয় শীর্ষক ছাত্র ইউনিয়নের  আলোচনা

  • আপডেট : ১১:০৮:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২২০

কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন, নেত্রকোনা :

৫৭তম শিক্ষা দিবসে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রকোনা শহর কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নেত্রকোনা উচ্চ বিদ্যালয় হল রুমে আগ্রাসী শিক্ষার দৈন্যদশায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করনীয় শীর্ষক অালোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

নেত্রকোনা শহর কমিটির সহ-সভাপতি মান্না খান জনি’র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার,মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ অনুপ সাদী, এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন, নেত্রকোনা জেলা সংসদের সভাপতি মিঠুন শর্মা, সাধারণ সম্পাদক পার্থ প্রতিম সরকার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকী নাদিম।

শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজিম রহান রাকিবে সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা মো. নূরুজ্জামান, দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মো. হীরা তালুকদার, মো. শরীফ খান সহ আরো অনেকে।

সভায় বক্তারা বলেন ৫৯ সালের গোড়ার দিক থেকে শিক্ষা কে বাণিজ্যে রূপান্তরিত করার জন্য শরীফ কমিশন তথা তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী একতরফা পায়তারা চালাচ্ছিল।তারই ফলশ্রুতিতে ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের আহুত হরতালে পুলিশি হামলায় ওয়াজীউল্লাহ বাবুল শহীদ হন।

সভায় বক্তারা আরো  বলেন, ১৯৫৯ সাল থেকেই ছাত্র ইউনিয়ন শরীফ শিক্ষা কমিশনের বৈষম্যমূলক শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে৷ ৬০ ও ৬১ সালের দিকে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে৷ ৬২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ডাকা হলে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ এর প্রতিবাদে ১৭ সেপ্টেম্বর সারাদেশে হরতাল ডাকা হয়।  ১৭ সেপ্টেম্বরের সেই হরতালে শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশ গুলি করে৷ নিহত হন মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ, বাবুল সহ নাম না জানা আরো অনেকেই। ওই দিন শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে মিছিলের উপর পুলিশ হামলা চালায়। টঙ্গিতে ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিককে। কিন্তু ওই দিন রক্তাক্ত ঘটনার পর রাজনৈতিক নেতারা একটি বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছিলেন।

পরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্ণর গোলাম ফারুকের সাথে বৈঠক করেন। সরকার শরিফ শিক্ষাকমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের কাজ স্থগিত ঘোষনা করে। ১৯৬২ সালের ৩৬৫ দিনের মধ্যে মাত্র ২৭ দিন ক্লাস হয়েছিল। ছাত্রদের এই দীর্ঘ ত্যাগ ও লড়াইয়ের ফলাফল শরীফ শিক্ষা কমিশন বাতিল।

বক্তারা আরো বলেন, মহান শিক্ষা দিবসের ৫৭ বছর পরেও দেশে বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান। বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা রেখে একটি জাতি কখনোই আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনা। প্রতিবছর প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। আমরা এখনো আমাদের কাংখিত কোন শিক্ষানীতি পাইনি। এখনো এদেশে কোন পূর্ন শিক্ষানীতি প্রনিত হয়নি। বরং বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের তৈরি করছে ভোগবাদী ও সুবিধাবাদী হিসাবে। তাই আমাদের লড়াই এখনো থামেনি। লক্ষ্য অর্জিত হবার আগ পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।

শিক্ষা দিবসের দাবি সমূহ ছিল- শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির স্বার্থে কর্পোরেট কোম্পানির উপর সারচার্জ আরোপ করতে হবে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও শিক্ষক সংকট নিরসন করতে হবে, নেত্রকোনা সরকারী কলেজসহ সকল অনার্স কলেজে ছাত্র হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে, গণপরিবহনে ছাত্রদের জন্য হাফ পাস চালু করতে হবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১০ দিনের ক্লাশ নিশ্চিত করতে হবে, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে, একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। আমাদের প্রকাশনা “পূর্বকন্ঠ” স্বাধীনতার চেতনায় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় অনলাইন । পাঠক আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা। পূর্বকণ্ঠ কথা বলে বাঙালির আত্মপ্রত্যয়ী আহ্বান ও ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার। কথা বলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে। ছড়িয়ে দিতে এ চেতনা দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে। আমরা রাষ্ট্রের আইন কানুন, রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী এবং বাঙ্গালীর আবহমান কালের সামাজিক সহনশীলতার বিপক্ষে পূর্বকন্ঠ কখনো সংবাদ প্রকাশ করে না। আমরা সকল ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন ধর্মমত বা তাদের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আমরা কিছু প্রকাশ করি না। আমাদের সকল প্রচেষ্টা পাঠকের সংবাদ চাহিদাকে কেন্দ্র করে। তাই পাঠকের যে কোনো মতামত আমরা সাদরে গ্রহন করব।
জনপ্রিয়

পূর্বধলায় বণিক সমিতির সাথে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর মতবিনিময়

নেত্রকোনায় আগ্রাসী শিক্ষার দৈন্যদশায় করনীয় শীর্ষক ছাত্র ইউনিয়নের  আলোচনা

আপডেট : ১১:০৮:৪০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন, নেত্রকোনা :

৫৭তম শিক্ষা দিবসে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নেত্রকোনা শহর কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নেত্রকোনা উচ্চ বিদ্যালয় হল রুমে আগ্রাসী শিক্ষার দৈন্যদশায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের করনীয় শীর্ষক অালোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

নেত্রকোনা শহর কমিটির সহ-সভাপতি মান্না খান জনি’র সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার,মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ও শিক্ষাবিদ অনুপ সাদী, এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ছাত্র ইউনিয়ন, নেত্রকোনা জেলা সংসদের সভাপতি মিঠুন শর্মা, সাধারণ সম্পাদক পার্থ প্রতিম সরকার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিকী নাদিম।

শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজিম রহান রাকিবে সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা মো. নূরুজ্জামান, দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মো. হীরা তালুকদার, মো. শরীফ খান সহ আরো অনেকে।

সভায় বক্তারা বলেন ৫৯ সালের গোড়ার দিক থেকে শিক্ষা কে বাণিজ্যে রূপান্তরিত করার জন্য শরীফ কমিশন তথা তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী একতরফা পায়তারা চালাচ্ছিল।তারই ফলশ্রুতিতে ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনের আহুত হরতালে পুলিশি হামলায় ওয়াজীউল্লাহ বাবুল শহীদ হন।

সভায় বক্তারা আরো  বলেন, ১৯৫৯ সাল থেকেই ছাত্র ইউনিয়ন শরীফ শিক্ষা কমিশনের বৈষম্যমূলক শিক্ষা নীতি বাতিলের দাবীতে আন্দোলন শুরু করে৷ ৬০ ও ৬১ সালের দিকে সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে৷ ৬২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট ডাকা হলে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়৷ এর প্রতিবাদে ১৭ সেপ্টেম্বর সারাদেশে হরতাল ডাকা হয়।  ১৭ সেপ্টেম্বরের সেই হরতালে শিক্ষার্থীদের মিছিলে পুলিশ গুলি করে৷ নিহত হন মোস্তফা, ওয়াজিউল্লাহ, বাবুল সহ নাম না জানা আরো অনেকেই। ওই দিন শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে মিছিলের উপর পুলিশ হামলা চালায়। টঙ্গিতে ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে পুলিশ গুলি চালিয়ে হত্যা করে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিককে। কিন্তু ওই দিন রক্তাক্ত ঘটনার পর রাজনৈতিক নেতারা একটি বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছিলেন।

পরে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্ণর গোলাম ফারুকের সাথে বৈঠক করেন। সরকার শরিফ শিক্ষাকমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নের কাজ স্থগিত ঘোষনা করে। ১৯৬২ সালের ৩৬৫ দিনের মধ্যে মাত্র ২৭ দিন ক্লাস হয়েছিল। ছাত্রদের এই দীর্ঘ ত্যাগ ও লড়াইয়ের ফলাফল শরীফ শিক্ষা কমিশন বাতিল।

বক্তারা আরো বলেন, মহান শিক্ষা দিবসের ৫৭ বছর পরেও দেশে বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা বিদ্যমান। বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা রেখে একটি জাতি কখনোই আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসাবে পৃথিবীর বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনা। প্রতিবছর প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। আমরা এখনো আমাদের কাংখিত কোন শিক্ষানীতি পাইনি। এখনো এদেশে কোন পূর্ন শিক্ষানীতি প্রনিত হয়নি। বরং বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের তৈরি করছে ভোগবাদী ও সুবিধাবাদী হিসাবে। তাই আমাদের লড়াই এখনো থামেনি। লক্ষ্য অর্জিত হবার আগ পর্যন্ত এই লড়াই চলবে।

শিক্ষা দিবসের দাবি সমূহ ছিল- শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির স্বার্থে কর্পোরেট কোম্পানির উপর সারচার্জ আরোপ করতে হবে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ও শিক্ষক সংকট নিরসন করতে হবে, নেত্রকোনা সরকারী কলেজসহ সকল অনার্স কলেজে ছাত্র হোস্টেলের ব্যবস্থা করতে হবে, গণপরিবহনে ছাত্রদের জন্য হাফ পাস চালু করতে হবে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১০ দিনের ক্লাশ নিশ্চিত করতে হবে, সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ কার্যকর করতে হবে, একমুখী বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।