নেত্রকোনা ১১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের লোক সংস্কৃতি

  • আপডেট : ১০:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৯
  • ২০১

মোহাম্মদ শাহা আলম:

একটি দেশের একটি সমাজের অথবা একটি জনপদের বহু প্রাচীন কাল হতে তার জীবন চারন চাল চলন কথা-বার্তা, খাদ্য-খাওয়া, গান বাজনা, বিবাহ ক্রীড়া অনুষ্ঠান সর্বোপরি তার জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি দৈনন্দিন কাজের যে রুটিন থাকে তার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সেই জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যে। যেহেতু এই বিষয় গুলি সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক সমাজের জীবন যাত্রার একটা পরিচ্ছন্ন প্রতিবিম্ব তাই একে লোক সংস্কৃতি বলাই যুুক্তিযুক্ত । এক্ষেত্রে আমাদের এই যে, হাজার বছরের পুরনো বাঙ্গালী জাতি এর একটা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে।একটা লোক ঐতিহ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে বাঙ্গালী জাতি।বাঙ্গালী জাতির আত্মপরিচয়ের ঠিকানা তার সুদীর্ঘ কালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বাঙ্গালীর প্রতিদিনের জীবনযাত্রা এক সময় শুরু হতো লোক সংস্কৃতির আবহে। কালক্রমে তা হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর উচ্চা-ভিলাসী ও বিপথগামী উন্মাসিক মনের মানুষ গুলি এই সংস্কৃতিকে লালনতো করেই না বরং এর মধ্যে বিদেশী বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে আমাদের দীর্ঘ কালের সংস্কৃতির মূল ভিত্তি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে।

বাঙ্গালী শিশুর জন্মের পরই তাকে শোনানো হতো ঘুম পাড়ানী ছড়া।ছড়া শুনতে শুনতে সে ঘুমিয়ে পড়তো।একটু বড় হলে তাকে লোক কাহিনী ভিত্তিক গল্প শুনিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো এক রাজার দেশ থেকে আর এক রাজার দেশে। কখনও বা রাক্ষস খোক্কসের গল্প রুপোর কাঠি সোনার কাঠি অথবা সুয়ো রানী দুয়োরানী । এমনি ভাবে তার বেড়ে উঠা। অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করতো সবুজ গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া রুপালী নদীতে ছবির মতো চলে যাচ্ছে পাল তোলা নৌকা।

নৌকা থেকে ভেসে আসতো ভাটিয়ালী ভাওয়াইয়া গান, জেলেরা মাছ ধরে ছোট ছোট নৌকা বোঝাই করছে।এপারে ওপারে বিস্তির্ন মাঠে কৃষকের চাষের দৃশ্য, ফসল ফলানোর প্রাণান্তকর চেষ্ঠা।দূর দিগন্তে গ্রাম। আকাশ মিলায় যেখানে। এসব দৃশ্য দেখে দেখে বাঙ্গালী শিশু নির্মল আনন্দে বেড়ে উঠতো। বিশুদ্ধ বায়ু আর সুন্দর সবুজের সমারোহ তাকে সব সময় সতেজ অনুভূতির মধ্যে রাখতো। এরপর শুরু হতো তার দূরন্ত কৈশোর।সারা গাঁ ঘুরে বেড়ানো মৌসুমী ফলের বাগানে হানা দেয় আর কাঁচা পাকা ফলে পেট ভরে যেতো।বিকালে খেলা-মাঠ জুড়ে হাডুডু, দাড়িয়াবান্দা, গোল্লাছুট এসব দেশীয় খেলায় মেতে উঠতো আমাদের ছেলেরা। কালক্রমে যে হারিয়ে যাচ্ছে এসব খেলা। অথচ আমাদের ক্রীড়া সংস্কৃতির একটা উল্লেখ যোগ্য অংশজুড়ে রয়েছে এসব দেশীয় খেলা। আমাদের খেলার জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেট,ফুটবল, হকি,গলফ,বাস্কেটবল ইত্যাদি। আমাদের গ্রাম গুলিতে এখন বৈজ্ঞানিক সভ্যতার আর্শীবাদে কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় অচ্ছন্ন। নদীর বুক দখল করেছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। শিশু জন্মের পরপরই প্রত্যক্ষ করছে উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির উন্মুক্ততা। তার কৌমল হৃদয়ে ঢেউ খেলে আমাদের লোক সংস্কৃতিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কোন সুদূরে কে জানে ?
¬
আমাদের কৃষক সমাজ সাড়া দিন কাজের শেষে অলস দেহে বসে পড়তো পাড়ার পুথিঁ পাঠের আসরে।কোথাও চলতো জারির আসর অথবা কবি গান। কিন্তু আজ কৃষক, দিনমুজুর, রিক্সাওয়ালা ছুটে চলে নীল ছবির আস্তানায়, সিনেমা হলে বা জুয়ার আসরে । আমাদের কৃষকের ক্ষেতে যে ফসল ফলতো তা দিয়ে তারা সারা বছর চলতো। হাহাকার ছিলনা, ছিলনা কোন অনটন। আর আজ কৃষকের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কৃষক বধুটি সাত সকালে পেট পুরে খাইয়ে স্বামীকে বিদায় করতো ফসলের মাঠে সে আজ বেসরকারী সংস্থার ঋনের কিস্তি যোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আমাদের লোক সংস্কৃতির উপর এই যে, বিজাতীয় প্রভাব এর ফলে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। আমাদের পুরো জীবন যাত্রার উপর একটি ব্যাপক পরিবর্তন ইতো মধ্যে ঘটে গেছে। অথচ এর জন্য দায়ী আমাদের সভ্য সমাজ। তারা চিন্তাই করেন না যে বাঙ্গালীর আসল পরিচয় তার সংস্কৃতি। অফুরন্ত সাংস্কৃতিক ভান্ডার লালনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। এমন একদিন আসতে পারে যেদিন বাঙ্গালীর কৃষ্টিগুলি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানাতে হলে ইতিহাসের বই বা যাদুঘরের স্মরনাপন্ন হতে হবে । বাঙ্গালীর মুখে মুখে যে ভাষা, সংস্কৃতি, গান, ছড়া কবিতা, প্রবাদ, শ্লোক সব সময় শ্রæত হত তা আর হয়ে উঠে না ।

সে আজ ব্যস্ত কর্মতৎপরতায় চঞ্চল বিনোদন যেন তার কাছে বিক্ষময় হয়ে উঠে। সুখের পরশ যেন নেই তার ঘরে অথবা বাইরে। আর যে শিশুটিকে স্কুলে অথবা মক্তবে পাঠানোর কথা তাকে দু পয়সা রোজগারের জন্য ইট ভাঙ্গা বা রিক্সা ধরিয়ে দিতে হচ্ছে। চরম অর্থ কষ্ট যেন অকে নতুন নতুন পথের সন্ধানে ব্যস্ত রাখছে । তাই এই সংস্কৃতির আধার এই কৃষক সমাজ নিজেই হারিয়ে যাচ্ছে রোজগারের গহিন অন্ধকারে । আর আমাদের উচুতলার মানুষ গুলো যেন প্রাসাদোপম অট্রালিকা থেকে অট্রহাস্যে প্রত্যক্ষ করছে। সমাজের উচ্ছিষ্ট বা অস্পৃশ্য বলে উপহাস করছে অবলীলায়।

তাই আমাদের লোক সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য আজ প্রয়োজনীয় সম্মিলিত উদ্যোগের। এ উদ্যোগ হতে পারে সরকারি বা বেসরকারি দুই পর্যায়েই। কেননা শুধু সরকারের উপর সংস্কৃতি রক্ষার দায় দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে বসে থাকলেই চলবেনা। কারণ তা আমলা তন্ত্রের মারপ্যাকে মুখ থুবরে পড়বে। এতে বেসরকারি উদ্যোগ সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। আর ও প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে মতামত সংগ্রহের। নইলে অফুরন্ত লোক সংস্কৃতির ভান্ডার এই সমাজ থেকে তা আহরণ করা যেমন হবে দুরুহ তেমনি দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে তাকে সংরক্ষন করা। এছাড়া সর্ব মহলকে সম্পৃক্ত করতে হবে এই কাজে। কারণ প্রতিটি বাঙ্গালীর কাছেই থাকতে পারে রোক সংস্কৃতির মূল্যবান তথ্য যেম বিশাল সাগরে থাকে ঝিনুকের মধ্যে মূল্যবান মুক্তোদানা।

 

মোহাম্মদ শাহা আলম
সহকারী শিক্ষক
মৌদাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
পূর্বধলা, নেত্রকোণা।
-লেখক-শিক্ষক ও কলামিষ্ট।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমার বর্তমান ঠিকানা স্টেশন রোড, পূর্বধলা, নেত্রকোনা। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমার ধর্ম ইসলাম। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। প্রয়োজনে: ০১৭১৩৫৭৩৫০২

দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের লোক সংস্কৃতি

আপডেট : ১০:৪৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০১৯

মোহাম্মদ শাহা আলম:

একটি দেশের একটি সমাজের অথবা একটি জনপদের বহু প্রাচীন কাল হতে তার জীবন চারন চাল চলন কথা-বার্তা, খাদ্য-খাওয়া, গান বাজনা, বিবাহ ক্রীড়া অনুষ্ঠান সর্বোপরি তার জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি দৈনন্দিন কাজের যে রুটিন থাকে তার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সেই জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যে। যেহেতু এই বিষয় গুলি সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক সমাজের জীবন যাত্রার একটা পরিচ্ছন্ন প্রতিবিম্ব তাই একে লোক সংস্কৃতি বলাই যুুক্তিযুক্ত । এক্ষেত্রে আমাদের এই যে, হাজার বছরের পুরনো বাঙ্গালী জাতি এর একটা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আছে।একটা লোক ঐতিহ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে বাঙ্গালী জাতি।বাঙ্গালী জাতির আত্মপরিচয়ের ঠিকানা তার সুদীর্ঘ কালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। বাঙ্গালীর প্রতিদিনের জীবনযাত্রা এক সময় শুরু হতো লোক সংস্কৃতির আবহে। কালক্রমে তা হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর উচ্চা-ভিলাসী ও বিপথগামী উন্মাসিক মনের মানুষ গুলি এই সংস্কৃতিকে লালনতো করেই না বরং এর মধ্যে বিদেশী বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে আমাদের দীর্ঘ কালের সংস্কৃতির মূল ভিত্তি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে জাতিকে।

বাঙ্গালী শিশুর জন্মের পরই তাকে শোনানো হতো ঘুম পাড়ানী ছড়া।ছড়া শুনতে শুনতে সে ঘুমিয়ে পড়তো।একটু বড় হলে তাকে লোক কাহিনী ভিত্তিক গল্প শুনিয়ে নিয়ে যাওয়া হতো এক রাজার দেশ থেকে আর এক রাজার দেশে। কখনও বা রাক্ষস খোক্কসের গল্প রুপোর কাঠি সোনার কাঠি অথবা সুয়ো রানী দুয়োরানী । এমনি ভাবে তার বেড়ে উঠা। অবাক বিষ্ময়ে লক্ষ্য করতো সবুজ গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া রুপালী নদীতে ছবির মতো চলে যাচ্ছে পাল তোলা নৌকা।

নৌকা থেকে ভেসে আসতো ভাটিয়ালী ভাওয়াইয়া গান, জেলেরা মাছ ধরে ছোট ছোট নৌকা বোঝাই করছে।এপারে ওপারে বিস্তির্ন মাঠে কৃষকের চাষের দৃশ্য, ফসল ফলানোর প্রাণান্তকর চেষ্ঠা।দূর দিগন্তে গ্রাম। আকাশ মিলায় যেখানে। এসব দৃশ্য দেখে দেখে বাঙ্গালী শিশু নির্মল আনন্দে বেড়ে উঠতো। বিশুদ্ধ বায়ু আর সুন্দর সবুজের সমারোহ তাকে সব সময় সতেজ অনুভূতির মধ্যে রাখতো। এরপর শুরু হতো তার দূরন্ত কৈশোর।সারা গাঁ ঘুরে বেড়ানো মৌসুমী ফলের বাগানে হানা দেয় আর কাঁচা পাকা ফলে পেট ভরে যেতো।বিকালে খেলা-মাঠ জুড়ে হাডুডু, দাড়িয়াবান্দা, গোল্লাছুট এসব দেশীয় খেলায় মেতে উঠতো আমাদের ছেলেরা। কালক্রমে যে হারিয়ে যাচ্ছে এসব খেলা। অথচ আমাদের ক্রীড়া সংস্কৃতির একটা উল্লেখ যোগ্য অংশজুড়ে রয়েছে এসব দেশীয় খেলা। আমাদের খেলার জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেট,ফুটবল, হকি,গলফ,বাস্কেটবল ইত্যাদি। আমাদের গ্রাম গুলিতে এখন বৈজ্ঞানিক সভ্যতার আর্শীবাদে কলকারখানার কালো ধোঁয়ায় অচ্ছন্ন। নদীর বুক দখল করেছে ইঞ্জিন চালিত নৌকা। শিশু জন্মের পরপরই প্রত্যক্ষ করছে উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির উন্মুক্ততা। তার কৌমল হৃদয়ে ঢেউ খেলে আমাদের লোক সংস্কৃতিকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় কোন সুদূরে কে জানে ?
¬
আমাদের কৃষক সমাজ সাড়া দিন কাজের শেষে অলস দেহে বসে পড়তো পাড়ার পুথিঁ পাঠের আসরে।কোথাও চলতো জারির আসর অথবা কবি গান। কিন্তু আজ কৃষক, দিনমুজুর, রিক্সাওয়ালা ছুটে চলে নীল ছবির আস্তানায়, সিনেমা হলে বা জুয়ার আসরে । আমাদের কৃষকের ক্ষেতে যে ফসল ফলতো তা দিয়ে তারা সারা বছর চলতো। হাহাকার ছিলনা, ছিলনা কোন অনটন। আর আজ কৃষকের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। কৃষক বধুটি সাত সকালে পেট পুরে খাইয়ে স্বামীকে বিদায় করতো ফসলের মাঠে সে আজ বেসরকারী সংস্থার ঋনের কিস্তি যোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

আমাদের লোক সংস্কৃতির উপর এই যে, বিজাতীয় প্রভাব এর ফলে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। আমাদের পুরো জীবন যাত্রার উপর একটি ব্যাপক পরিবর্তন ইতো মধ্যে ঘটে গেছে। অথচ এর জন্য দায়ী আমাদের সভ্য সমাজ। তারা চিন্তাই করেন না যে বাঙ্গালীর আসল পরিচয় তার সংস্কৃতি। অফুরন্ত সাংস্কৃতিক ভান্ডার লালনের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে কালের গর্ভে। এমন একদিন আসতে পারে যেদিন বাঙ্গালীর কৃষ্টিগুলি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানাতে হলে ইতিহাসের বই বা যাদুঘরের স্মরনাপন্ন হতে হবে । বাঙ্গালীর মুখে মুখে যে ভাষা, সংস্কৃতি, গান, ছড়া কবিতা, প্রবাদ, শ্লোক সব সময় শ্রæত হত তা আর হয়ে উঠে না ।

সে আজ ব্যস্ত কর্মতৎপরতায় চঞ্চল বিনোদন যেন তার কাছে বিক্ষময় হয়ে উঠে। সুখের পরশ যেন নেই তার ঘরে অথবা বাইরে। আর যে শিশুটিকে স্কুলে অথবা মক্তবে পাঠানোর কথা তাকে দু পয়সা রোজগারের জন্য ইট ভাঙ্গা বা রিক্সা ধরিয়ে দিতে হচ্ছে। চরম অর্থ কষ্ট যেন অকে নতুন নতুন পথের সন্ধানে ব্যস্ত রাখছে । তাই এই সংস্কৃতির আধার এই কৃষক সমাজ নিজেই হারিয়ে যাচ্ছে রোজগারের গহিন অন্ধকারে । আর আমাদের উচুতলার মানুষ গুলো যেন প্রাসাদোপম অট্রালিকা থেকে অট্রহাস্যে প্রত্যক্ষ করছে। সমাজের উচ্ছিষ্ট বা অস্পৃশ্য বলে উপহাস করছে অবলীলায়।

তাই আমাদের লোক সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য আজ প্রয়োজনীয় সম্মিলিত উদ্যোগের। এ উদ্যোগ হতে পারে সরকারি বা বেসরকারি দুই পর্যায়েই। কেননা শুধু সরকারের উপর সংস্কৃতি রক্ষার দায় দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে বসে থাকলেই চলবেনা। কারণ তা আমলা তন্ত্রের মারপ্যাকে মুখ থুবরে পড়বে। এতে বেসরকারি উদ্যোগ সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। আর ও প্রয়োজন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে মতামত সংগ্রহের। নইলে অফুরন্ত লোক সংস্কৃতির ভান্ডার এই সমাজ থেকে তা আহরণ করা যেমন হবে দুরুহ তেমনি দুঃসাধ্য হয়ে উঠবে তাকে সংরক্ষন করা। এছাড়া সর্ব মহলকে সম্পৃক্ত করতে হবে এই কাজে। কারণ প্রতিটি বাঙ্গালীর কাছেই থাকতে পারে রোক সংস্কৃতির মূল্যবান তথ্য যেম বিশাল সাগরে থাকে ঝিনুকের মধ্যে মূল্যবান মুক্তোদানা।

 

মোহাম্মদ শাহা আলম
সহকারী শিক্ষক
মৌদাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
পূর্বধলা, নেত্রকোণা।
-লেখক-শিক্ষক ও কলামিষ্ট।