মানুষ প্রতিমুহূর্তের স্পন্দন ও প্রবাহের মধ্য দিয়ে তার জীবিত ও জাগর সত্ত¡াটাকে অস্তিত্বময় করে রাখে। আর তার অস্তিত্ব, অবস্থান, গতি-প্রকৃতি ও শক্তির অন্বয় রচনা করে। অস্তিত্বের জন্য, মনুষ্যত্ব ও মানবিক অর্জনের জন্য তার ভাষা ব্যবহার করে।
ভাষার চালিত শক্তির প্রয়োগে তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন সঞ্চালিত হয়, মস্তিষ্ক কোটর, স্মৃতিকোষ, চেতনা- চৈতন্য, অনুভূতি ও উপলব্ধি তেমনি ক্রিয়াশীল হতে থাকে। ব্যক্তিসত্ত¡া ভাষার মাধ্যমে জাগরিত হয়-বিকশিত হয়। একটি জাতির সত্ত¡াও প্রথমত এবং শেষত ভাষার মাধ্যমে বিকশিত হতে থাকে। ভাষা মানুষের অস্তিত্বকে ধারণ করে এবং স্পন্দমান করে। বিশ্বাসকে বাক্সময় ও বিভাসিত করে। আন্ত:সলিলার মত বয়ে যেতে থাকে অন্তর্লোকের সমস্ত অন্দর-কন্দর পেরিয়ে। আমরা আমাদের মায়ের হৃদয়ের স্পন্দন শুনি এই ভাষায়।
আমাদের ঘুম নেমে আসে মাতৃভাষার ছন্দে। মাতৃভাষার আদরে নেমে আসে রাতের নিরালা। ভোরের নরম আলো জ্বলে ওঠে আমাদের মাতৃভাষার সৌন্দর্যে। এখনো এই সুন্দরই আমাদেরকে তৃপ্ত করে। সুতরাং মাতৃভাষা আমাদের মুখের ভাষা নয়, আমাদের অস্তিত্বের ভাষা। মাতৃভাষাকে বাদ দিলে আমাদের পরিচয় গৌণ হয়ে যায়।
শেকড় ছিন্ন বৃক্ষের মতো দুর্বল হয়ে যায়। মাতৃভাষার জন্যই প্রতিটি জাতি সর্বদা বদ্ধপরিকর। মাভৃভাষাকে আঁকড়ে ধরেই তাদের পথচলা। মানুষের ভাষাকে কোনোভাবেই অবরুদ্ধ করা যায় না। ভাষাকে ধ্বংস করাও সম্ভবপর নয়। এই ভাষার মর্যাদা রক্ষায় যারা লড়াই করে প্রাণ উৎসর্গ করেছেন তাদের ও সকল ভাষা সৈনিকদের জানাই পূর্বকন্ঠ পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী।