নেত্রকোনা ০২:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পূর্বধলার ভাষা সৈনিক ইউনুছ আলী মন্ডল ও তাঁর কিছু কথা

মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে পৃথিবীতে যে সকল আন্দোলন এ যাবতকালে সংগঠিত হয়েছে, তার মধ্যে বাঙ্গালির ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত। যে কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। বিশ্ব মানচিত্রের কোনো রাষ্ট্র যা দেখাতে পারেনি বাঙ্গালিরা তা মাথা উঁচু করে দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বসভায়। সেই বাঙ্গালিদের একজন ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ও ৭১ এর মুক্তি সংগ্রামের লড়াকু সৈনিক হিসেবে এক জীবন্ত কিংবদন্তীর নাম।

১৯৩৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের বাড়হা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আলহাজ্ব শাহছু মন্ডল। তিনি ছাত্র রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পারিবারিক কারণে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলেও তৎকালীন সময়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক/প্রবেশিকা পাশ করেন। তবে তিনি ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তাঁর নিজ ইউনিয়নের জারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। যখন তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন তখনই ছাত্র রাজনীতিতে যোগদেন। শুরু হয় ভাষা আন্দোলন।

ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি। ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। মিটিং-মিছিলে নেতৃত্ব দেন। প্রগতিশীল সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভাষার পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজ করতে থাকেন। প্রতিষ্ঠা হয় মহান মাতৃ ভাষার। আর এই ভাষার ভালোবাসায় প্রাণ উৎসর্গ করে বিশ্বে ভাষার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত, সালাম, রফিক প্রমুখ। সারা দেশে ভাষা সৈনিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন অনেকেই। নেত্রকোনার পূর্বধলায়ও রয়েছেন ৭ ভাষা সৈনিক।

তাদের মধ্যে আজো যিনি চেতনার আলো জ্বেলে যাচ্ছেন তিনি হলেন, ভাষা সৈনিক আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল। একান্ত আলাপচারিতায় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি জানান, ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জেতার পর ১৯৫৭ সালে শিক্ষা জীবন শেষ করে যুক্ত হন শিক্ষকতার মতো মহান পেশায়। তবে সে পেশায় বেশী দিন থাকেননি। সেই ছাত্র রাজনীতির মতই আবারও স্বক্রীয় হয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ১৯৬৮ সালে পূর্বধলায় প্রথম থানা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলে তিনি সেই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। শুরু হয় গণঅভ্যুত্থান। বঙ্গবন্ধুসহ অন্য আসামিদের মুক্তি এবং সামরিক শাসন উৎখাতের দাবিতে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি কারফিউ ভঙ্গ করে ছাত্র-শিক্ষক ও জনতা মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ছাত্রলীগ কর্মী নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান।

যার বুক পকেটে লেখা ছিল- ‘মা শেখ মুজিবকে মুক্ত করতে যাচ্ছি’। এর আগে আগরতলা মামলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তখন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব ব্যবস্থাই করে ফেলেছিল পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আইয়ুব খান। যার প্রতিবাদে জাগ্রত ছাত্রসমাজ তখন ফুঁসে উঠে। ১৭ জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলে শোষিত মানুষের পক্ষে মুক্তিকামী ছাত্রসমাজ ১১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এ অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। মূলত ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে সারাদেশে আন্দোলনের আগুন জ্বলে উঠে। মতিউর-মকবুল-রোস্তমের বুকের তাজা রক্তে সারাদেশে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। আর সেই গণঅভ্যুত্থানে পূর্বধলা থানায় নেতৃত্বদেন আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল। ওই গণঅভ্যুত্থানের মুখেই পতন ঘটে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের।

এর পর শুরু হয় মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিকামী কৃষক,ছাত্র, জনতার সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল। তখন ভারতের রংরা ইউথ ক্যাম্পের ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ১১ নং সেক্টরের শিব বাড়ি ক্যাম্পের ক্যাম্প ইন-চার্জের দায়িত্ব পালন করেন এই আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল। মুক্তি যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক। স্বাধীন হয় আমাদের এই দেশ। তখন তিনি পূর্বধলা থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল ১৯৭৪ সালে কাউন্সীলের মাধ্যমে পূর্বধলা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পূর্বধলায় প্রথম প্রতিবাদ মিছিল বের হয় আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডলের নেতৃত্বে।

তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদের দায়ে তৎকালীন সেনা সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর ১৮ দিন আটকে রেখে জারিয়া ডাক বাংলোর সামনে রেইনট্রি গাছে ঝুলিয়ে প্রকাশ্য নির্যাতন শুরু করে। গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃতপ্রায়, জলন্ত সিগারেট দিয়ে জ্বলসে দেয় শরীর। গরম সুই দিয়ে নখের নিচে আঘাত করতে করতে শাস্তি দেয়। এ সময় এই ভাষা সৈনিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক দীর্ঘ আড়াই বছর কারাভোগ করেন। এর পর ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় মিজান আওয়ামী লীগ থেকে মই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ভাষা সৈনিক আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল আরোবলেন, মায়ের ভাষার অধিকার এবং সম্মান রক্ষায় ভাষা আন্দোলন করেছি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কিংবা ভাতার জন্য আমরা ভাষা আন্দোলন করিনি। তবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং ভাষা শহীদদের অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে স্বীকৃতি প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, দুঃখের বিষয় আজ ভাষা সৈনিক হিসেবে সরকারের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে স্বীকৃতি চাইতে হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের যদি সরকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, মর্যাদা, ভাতা দিতে পারেন তবে ভাষা সৈনিকদের কেন তা দিতে পারবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমার বর্তমান ঠিকানা স্টেশন রোড, পূর্বধলা, নেত্রকোনা। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমার ধর্ম ইসলাম। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। প্রয়োজনে: ০১৭১৩৫৭৩৫০২

দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

পূর্বধলার ভাষা সৈনিক ইউনুছ আলী মন্ডল ও তাঁর কিছু কথা

আপডেট : ১১:৩৯:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২০

মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে পৃথিবীতে যে সকল আন্দোলন এ যাবতকালে সংগঠিত হয়েছে, তার মধ্যে বাঙ্গালির ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলন শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত। যে কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। বিশ্ব মানচিত্রের কোনো রাষ্ট্র যা দেখাতে পারেনি বাঙ্গালিরা তা মাথা উঁচু করে দেখিয়ে দিয়েছে বিশ্বসভায়। সেই বাঙ্গালিদের একজন ভাষা সৈনিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন ও ৭১ এর মুক্তি সংগ্রামের লড়াকু সৈনিক হিসেবে এক জীবন্ত কিংবদন্তীর নাম।

১৯৩৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের বাড়হা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আলহাজ্ব শাহছু মন্ডল। তিনি ছাত্র রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পারিবারিক কারণে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে না পারলেও তৎকালীন সময়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার গোয়াতলা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক/প্রবেশিকা পাশ করেন। তবে তিনি ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত তাঁর নিজ ইউনিয়নের জারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। যখন তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়েন তখনই ছাত্র রাজনীতিতে যোগদেন। শুরু হয় ভাষা আন্দোলন।

ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে পড়েন তিনি। ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। মিটিং-মিছিলে নেতৃত্ব দেন। প্রগতিশীল সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ভাষার পক্ষে জনমত সৃষ্টির কাজ করতে থাকেন। প্রতিষ্ঠা হয় মহান মাতৃ ভাষার। আর এই ভাষার ভালোবাসায় প্রাণ উৎসর্গ করে বিশ্বে ভাষার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার, আবুল বরকত, সালাম, রফিক প্রমুখ। সারা দেশে ভাষা সৈনিক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন অনেকেই। নেত্রকোনার পূর্বধলায়ও রয়েছেন ৭ ভাষা সৈনিক।

তাদের মধ্যে আজো যিনি চেতনার আলো জ্বেলে যাচ্ছেন তিনি হলেন, ভাষা সৈনিক আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল। একান্ত আলাপচারিতায় কথা হয় তাঁর সাথে। তিনি জানান, ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জেতার পর ১৯৫৭ সালে শিক্ষা জীবন শেষ করে যুক্ত হন শিক্ষকতার মতো মহান পেশায়। তবে সে পেশায় বেশী দিন থাকেননি। সেই ছাত্র রাজনীতির মতই আবারও স্বক্রীয় হয়ে পড়েন রাজনীতিতে। ১৯৬৮ সালে পূর্বধলায় প্রথম থানা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলে তিনি সেই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। শুরু হয় গণঅভ্যুত্থান। বঙ্গবন্ধুসহ অন্য আসামিদের মুক্তি এবং সামরিক শাসন উৎখাতের দাবিতে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি কারফিউ ভঙ্গ করে ছাত্র-শিক্ষক ও জনতা মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ছাত্রলীগ কর্মী নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান।

যার বুক পকেটে লেখা ছিল- ‘মা শেখ মুজিবকে মুক্ত করতে যাচ্ছি’। এর আগে আগরতলা মামলায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তখন ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সব ব্যবস্থাই করে ফেলেছিল পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আইয়ুব খান। যার প্রতিবাদে জাগ্রত ছাত্রসমাজ তখন ফুঁসে উঠে। ১৭ জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলে শোষিত মানুষের পক্ষে মুক্তিকামী ছাত্রসমাজ ১১ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এ অভ্যুত্থান সৃষ্টি করে। মূলত ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি শহীদ আসাদের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে সারাদেশে আন্দোলনের আগুন জ্বলে উঠে। মতিউর-মকবুল-রোস্তমের বুকের তাজা রক্তে সারাদেশে গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। আর সেই গণঅভ্যুত্থানে পূর্বধলা থানায় নেতৃত্বদেন আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল। ওই গণঅভ্যুত্থানের মুখেই পতন ঘটে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের।

এর পর শুরু হয় মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মুক্তিকামী কৃষক,ছাত্র, জনতার সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল। তখন ভারতের রংরা ইউথ ক্যাম্পের ইন-চার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ১১ নং সেক্টরের শিব বাড়ি ক্যাম্পের ক্যাম্প ইন-চার্জের দায়িত্ব পালন করেন এই আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল। মুক্তি যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক। স্বাধীন হয় আমাদের এই দেশ। তখন তিনি পূর্বধলা থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল ১৯৭৪ সালে কাউন্সীলের মাধ্যমে পূর্বধলা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পূর্বধলায় প্রথম প্রতিবাদ মিছিল বের হয় আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডলের নেতৃত্বে।

তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদের দায়ে তৎকালীন সেনা সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পর ১৮ দিন আটকে রেখে জারিয়া ডাক বাংলোর সামনে রেইনট্রি গাছে ঝুলিয়ে প্রকাশ্য নির্যাতন শুরু করে। গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় মৃতপ্রায়, জলন্ত সিগারেট দিয়ে জ্বলসে দেয় শরীর। গরম সুই দিয়ে নখের নিচে আঘাত করতে করতে শাস্তি দেয়। এ সময় এই ভাষা সৈনিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক দীর্ঘ আড়াই বছর কারাভোগ করেন। এর পর ১৯৭৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে তিনি দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় মিজান আওয়ামী লীগ থেকে মই প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ভাষা সৈনিক আলহাজ্ব ইউনুছ আলী মন্ডল আরোবলেন, মায়ের ভাষার অধিকার এবং সম্মান রক্ষায় ভাষা আন্দোলন করেছি। রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি কিংবা ভাতার জন্য আমরা ভাষা আন্দোলন করিনি। তবে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং ভাষা শহীদদের অবদানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে স্বীকৃতি প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, দুঃখের বিষয় আজ ভাষা সৈনিক হিসেবে সরকারের কাছে, রাষ্ট্রের কাছে স্বীকৃতি চাইতে হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের যদি সরকার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, মর্যাদা, ভাতা দিতে পারেন তবে ভাষা সৈনিকদের কেন তা দিতে পারবেন না।