নেত্রকোনা ০৯:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নেত্রকোনায় দুইটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন

নেত্রকোনায় ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে ঘটে যাওয়া দুইটি চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে নেত্রকোনা জেলা পুলিশ। একটি সদর উপজেলায় স্ত্রী কর্তৃক স্কুল শিক্ষক স্বামী হত্যাকান্ড ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উন্মোচন। অপরটি বারহাট্টা উপজেলায় স্বামীর হাতে সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী খুনের ঘটনা উদঘাটন। শনিবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের কাছে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্‌সী এসব তথ্য অবহিত করেন। হত্যাকান্ড দুইটিই পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়েছে বলে জানা যায়।

গত ২৭ জানুযারী সকালে সদর উপজেলায় গোবিন্দ্রশী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর শিক্ষার শিক্ষক মো. উজ্জ্বল চৌধুরীর (৪২) মৃতদেহ সিংহের বাংলা ইউপির কোনাপাড়া গ্রামে শ্বশুর বাড়ির অদুরে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে। সে মদন উপজেলার গোবিন্দ্রশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীরচর্চার শিক্ষক এবং দুই সন্তানের জনক। এ ঘটনার রহস্য ৪৮ ঘন্টার মধ্যে উম্মোচন করতে পেরেছে বলে পুলিশ সুপার জানান, ২৬ জানুয়ারী মনি বেগম পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার বাবার বাড়িতে স্পীডের (কোমল পানীয়) সাথে চারটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামী উজ্জ্বল চৌধুরীকে সেবন করায়। সন্ধ্যার দিকে ঝগড়া বিবাদের কারণে উজ্জ্বল বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে মনি বেগম মোবাইলে উজ্জ্বলকে টাকার দেবে বলে ওই জঙ্গলে আসতে বলে।

সেখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী মনি বেগমের চাচাতো ভাই আনারুল ইসলাম জয় (১৫) বাইসাইকেল যোগে সেখানে অবস্থান করছিল। স্পীডের সাথে ঘুমের ওষুধের ফলে উজ্জ্বল তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পরে মনি ও তার চাচাতো ভাই উজ্জ্বলের হাত, পা ও মুখ মাফলার দিয়ে বেঁধে চাদরের সাহায্যে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং লাশ টেনে হেঁচড়ে জঙ্গলের পাশে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। এ বিষয়ে আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে তিনি জানান।

অপরদিকে গত ৮ জানুয়ারী দিনগত রাতে সংঘটিত নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা গ্রামে তমালিকা (২০) নামে এক সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূর গলাকাটা হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে পুলিশ সুপার বলেন, অনুমান এক বছর পূর্বে রাসেল ও তমালিকার বিবাহ সম্পন্ন হয়। একে অপরের সাথে পারিবারিক বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও বিরোধ চলে আসছিলো। গত ৮ জানুয়ারী দুপুরে রাসেল ও অজ্ঞাতনামা (তদন্তের স্বার্থে নাম গোপন) আরেকজনকে নিয়ে ভালুকা থেকে রওনা দেয়। অনুমান রাত ১২টার দিকে তারা বাড়িতে পৌছে। রাসেলের মা দরজা খুলে দেয় এবং পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাসেলের মার হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে তারা। তমালিকার শয়নকক্ষে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় নাক মুখ চেপে ধরায় তমালিকা অজ্ঞান হয়ে যায়। দুজনে মিলে ধরাধরি করে তমালিকাকে বারান্দার মেঝেতে রেখে চাকু দিয়ে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চুরির নাটক সাজানো হয়।

এঘটনায় মুল আসামি রাসেলকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ গাজীপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। আসামি রাসেল খুবই দূরদর্শী এবং মোবাইল প্রযুক্তি সম্পর্কে কৌশলী ছিল। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর এলাকায় আরেকটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল তার। সে মেয়ের সহযোগিতায় অবশেষে গত ৩০ জানুয়ারী রাসেলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরিদ আহমেদ সহ সঙ্গীয় পুলিশ সদসরা। রাসেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং এ কাজে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান নেত্রকোনার পুলিশ সুপার আকবার আকবর আলী মুন্‌সী। সেই সাথে তিনি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড দুইটির সংশ্লিষ্ট কাজে তদন্ত ও গ্রেফতারে সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের রাতদিন নিরলস পরিশ্রমের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস এম আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফকরুজ্জামান জুয়েল, সংশ্লিষ্ট দুই থানার ওসি সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক্স মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমার বর্তমান ঠিকানা স্টেশন রোড, পূর্বধলা, নেত্রকোনা। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমার ধর্ম ইসলাম। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। প্রয়োজনে: ০১৭১৩৫৭৩৫০২

দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

নেত্রকোনায় দুইটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন

আপডেট : ০৫:৩০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২০

নেত্রকোনায় ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে ঘটে যাওয়া দুইটি চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে নেত্রকোনা জেলা পুলিশ। একটি সদর উপজেলায় স্ত্রী কর্তৃক স্কুল শিক্ষক স্বামী হত্যাকান্ড ৪৮ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উন্মোচন। অপরটি বারহাট্টা উপজেলায় স্বামীর হাতে সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা স্ত্রী খুনের ঘটনা উদঘাটন। শনিবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকদের কাছে পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্‌সী এসব তথ্য অবহিত করেন। হত্যাকান্ড দুইটিই পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়েছে বলে জানা যায়।

গত ২৭ জানুযারী সকালে সদর উপজেলায় গোবিন্দ্রশী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর শিক্ষার শিক্ষক মো. উজ্জ্বল চৌধুরীর (৪২) মৃতদেহ সিংহের বাংলা ইউপির কোনাপাড়া গ্রামে শ্বশুর বাড়ির অদুরে জঙ্গল থেকে উদ্ধার করে। সে মদন উপজেলার গোবিন্দ্রশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীরচর্চার শিক্ষক এবং দুই সন্তানের জনক। এ ঘটনার রহস্য ৪৮ ঘন্টার মধ্যে উম্মোচন করতে পেরেছে বলে পুলিশ সুপার জানান, ২৬ জানুয়ারী মনি বেগম পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার বাবার বাড়িতে স্পীডের (কোমল পানীয়) সাথে চারটি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে স্বামী উজ্জ্বল চৌধুরীকে সেবন করায়। সন্ধ্যার দিকে ঝগড়া বিবাদের কারণে উজ্জ্বল বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে মনি বেগম মোবাইলে উজ্জ্বলকে টাকার দেবে বলে ওই জঙ্গলে আসতে বলে।

সেখানে পরিকল্পনা অনুযায়ী মনি বেগমের চাচাতো ভাই আনারুল ইসলাম জয় (১৫) বাইসাইকেল যোগে সেখানে অবস্থান করছিল। স্পীডের সাথে ঘুমের ওষুধের ফলে উজ্জ্বল তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। পরে মনি ও তার চাচাতো ভাই উজ্জ্বলের হাত, পা ও মুখ মাফলার দিয়ে বেঁধে চাদরের সাহায্যে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং লাশ টেনে হেঁচড়ে জঙ্গলের পাশে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। এ বিষয়ে আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে তিনি জানান।

অপরদিকে গত ৮ জানুয়ারী দিনগত রাতে সংঘটিত নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা গ্রামে তমালিকা (২০) নামে এক সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূর গলাকাটা হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন সম্পর্কে পুলিশ সুপার বলেন, অনুমান এক বছর পূর্বে রাসেল ও তমালিকার বিবাহ সম্পন্ন হয়। একে অপরের সাথে পারিবারিক বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও বিরোধ চলে আসছিলো। গত ৮ জানুয়ারী দুপুরে রাসেল ও অজ্ঞাতনামা (তদন্তের স্বার্থে নাম গোপন) আরেকজনকে নিয়ে ভালুকা থেকে রওনা দেয়। অনুমান রাত ১২টার দিকে তারা বাড়িতে পৌছে। রাসেলের মা দরজা খুলে দেয় এবং পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রাসেলের মার হাত ও মুখ বেঁধে ফেলে তারা। তমালিকার শয়নকক্ষে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় নাক মুখ চেপে ধরায় তমালিকা অজ্ঞান হয়ে যায়। দুজনে মিলে ধরাধরি করে তমালিকাকে বারান্দার মেঝেতে রেখে চাকু দিয়ে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে চুরির নাটক সাজানো হয়।

এঘটনায় মুল আসামি রাসেলকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ গাজীপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। আসামি রাসেল খুবই দূরদর্শী এবং মোবাইল প্রযুক্তি সম্পর্কে কৌশলী ছিল। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার সিডস্টোর এলাকায় আরেকটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল তার। সে মেয়ের সহযোগিতায় অবশেষে গত ৩০ জানুয়ারী রাসেলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ফরিদ আহমেদ সহ সঙ্গীয় পুলিশ সদসরা। রাসেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এবং এ কাজে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান নেত্রকোনার পুলিশ সুপার আকবার আকবর আলী মুন্‌সী। সেই সাথে তিনি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড দুইটির সংশ্লিষ্ট কাজে তদন্ত ও গ্রেফতারে সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের রাতদিন নিরলস পরিশ্রমের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।

এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) এস এম আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শাহজাহান মিয়া, অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) ফকরুজ্জামান জুয়েল, সংশ্লিষ্ট দুই থানার ওসি সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেট্রনিক্স মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।