ঝিনাইগাতী(শেরপুর)প্রতিনিধি:
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের একটা মিথ্যা সনদে জমি হারানোর আশঙ্কায় সমিকা ¤্রং নামে এক আদিবাসী পরিবার দিশেহারা হয়ে পরেছে। সমিকা উপজেলার ধানশাইল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি মাতৃতান্ত্রিক ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হন প্রায় ৩০ একর জমি। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই ওই জমি ভোগ দখল করে আসছেন ওই আদিবাসী পরিবার। জানা যায়, বিআরএস রেকর্ডে ভুলবশত তারসিলা ও প্রসন্ন ¤্রং’র নামে হয়। তারসিলা ওই বংশের কেউ নন। উক্ত বিআরএস রেকর্ডের সূত্র ধরে তারসিলার কন্যা উর্সূলা ¤্রং ও তার দুই বোন উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশির নিকট থেকে একটি মিথ্যা ওয়ারিশ নামা সনদপত্র গ্রহণ করেন।
ওই সনদপত্র মূলে ২০১৭ সালে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে পুরো জমি তাদের তিন বোনের নামে খাজনা খারিজ ও নাম জারী করে নেয়। ধানশাইল ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সুজন কুমার সোম ও উপজেলা ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জমির বিস্তারীত কাগজপত্র যাচাই-বাছাই না করেই জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে তাদের নামে জমির নাম জারী ও খারিজ করে দেন। উর্সূলা ¤্রং ওই জমি খারিজ করেই জমি দখলে নিতে মাঠে নামে। এতে জমি হারানোর আশংঙ্কায় দিসে হারা হয়ে পরে সমিকা ¤্রং ও তার পরিবারের সদস্যরা। ঘটনাটি জানা জানি হয়ে গেলে সমিকা ¤্রং উক্ত খারিজ বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন।
উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) ঝিনাইগাতী উপজেলা সহকারী কমিশিনার (ভূমি)’কে তার দপ্তরে রক্ষিত ওই নাম জারী ও খারিজের ফাইল তার দপ্তরে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এ সময় পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ফাইলটি গায়েব করে ফেলেন। ফলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নিকট ফাইল প্রদর্শনে ব্যর্থ হন উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা। পরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ বি এম এহছানুল মামুন ওই ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি)’কে নির্দেশ ও সমিকা ¤্রং’কে আদালতে যেতে পরামর্শ দেয়া হয়।
৪ সেপ্টেম্বর বুধবার সমিকা ¤্রং মিথ্যা ওয়ালিশ নামা সনদপত্র দেয়ার অভিযোগে ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশি, দুই ভূমি কর্মকর্তা,উর্সূলা ও তার দুই বোনের নামে আদালতের একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঝিনাইগাতী থানা ওসি’কে নির্দেশ দেন। এ মামলার আইনজীবি ছিলেন এডভোকেট আলমগীর কিবরিয়া কামরুল। ওসি আবু বকর ছিদ্দিক বলেন, আদালতের কপি এখনো হাতে পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ধানশাইল ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সুজন কুমার সোম বলেন, ওয়ারিশ নামা সনদপত্র মূলে খারিজ করা হয়েছে। অন্য কোন কাগজপত্র দাখিল হয়নি। উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নবেশ খকশি বলেন, ওয়ারিশ নামা সনদপত্র মিথ্যা নয়। তবে তিনি স্বীকার করে বলেন, উর্সূলার নানী দানজি জমির মালিক মিনাং’র কাজের মেয়ে ছিলেন। তারা ওই বংশের কেউ না। উর্সূলা ¤্রং বলেন, মা ও নানার নামে বিআরএস রেকর্ড হওয়ায় আমরা তা খারিজ করে নিয়েছি।
এদিকে সমিকা ¤্রং আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করেও নিজ দখলীয় জমি টিকিয়ে রাখতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাকে। সমিকা ¤্রং জমি হারানোর আশঙ্কায় দীশেহারা হয়ে পরেছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) রাশেদুল হাসান বলেন, সমিকা ¤্রং’র বিষয়টি উচ্চতর আদালতেই সমাধান হবে। অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।