| আপডেট ২:১৭ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট | 364
নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া :
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর সোনালী ব্যাংক শাখার ভুয়া পে-অর্ডার দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সোনালী ব্যাংকের দালাল চক্রের প্রধান সোহেল রানা ও সহযোগী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার জন্য ব্যাংকের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ভুক্তভুগিরা জানান, মাসিক অথবা কোন ক্ষেত্রে দৈনন্দিন লোভনীয় মুনাফার ফাঁদে ফেলে ওই চক্রের প্রধান কথিত গণমাধ্যম কর্মীদের ভুইফোর সংগঠন ডিবিসি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রানার নেতৃত্বে চক্রটি মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের হাতে ভুয়া পে-অর্ডার ধরিয়ে দিয়ে নিজে লাপাত্তা হয়েছেন। এ ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠিত হলে তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।
এক লক্ষ টাকায় ১হাজার ৮শত টাকা বিশেষ ক্ষেত্রে ২ হাজার টাকা মুনাফা মাসিক অথবা দৈনন্দিন এমন লোভনীয় প্রস্তাবে জায়গা জমি বিক্রি করে অথবা জমানো গচ্ছিত অর্থ দৌলতপুর উপজেলার মহিদুল ইসলাম ওরফে মইদুল ২৩ লক্ষ টাকা তুলে দেন সোনালী ব্যাংকের দালাল প্রতারক সোহেল রানার হাতে। এমন লোভনীয় প্রস্তাবে একই এলাকার আবুল হোসেন নেন্টু ১৮ লাখ টাকা, ইয়াকুব আলীর নাতি ছেলে শান্ত সাড়ে ৬ লাখ টাকা, তাইজুল ইসলাম ২লাখ টাকা, মোকাদ্দেস আলী ১০ লাখ টাকা, রিয়াজুল ইসলাম ৯ লাখ টাকাসহ অন্তত ২০ জনের কাছ থেকে সোহেল রানা হাতিয়ে নেয় ৯৬ লাখ টাকা।
কয়েকমাস এমন লোভনীয় লাভের টাকাও পান ওই সব ভুক্তভুগিরা। প্রতারক সোহেল রানা কাউকে না জানিয়ে তার সহযোগী মনিরুজ্জামান ওরফে মনিরের কাছে বাবা জামিরুল ইসলাম ওরফে জামু ৩কাঠা জমি রেজিষ্ট্রি করতে গেলে ভুক্তভুগিদের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তখন তারা সোহেল রানা ও তার প্রধান সহযোগী মনিরুজ্জামান ওরফে মনির চিটের কাছ থেকে লাভ্যাংশ নেয়ার জন্য জমা রাখার টাকা চাইতে গেলে তারা শুরু করে তালবাহানা। এক পর্যায় টাকা না দিয়ে সোনালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখার পে-অর্ডার তুলে দেন ভুক্তভুগিদের হাতে। কিন্তু, বিপত্তি ঘটে তখনই ওই পে-অর্ডার ব্যাংকে ভাংগাতে গিয়ে। ব্যাংকের কর্মকর্তারা তাদের সাফ জানিয়ে দেয় ওই পে-অর্ডারের বিপরীতে কোন টাকা নেই।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের এমন কথায় মাথায় বাজ ভেঙ্গে পরে ভুক্তভুগিদের। ভুক্তভুগিরা যোগাযোগ করেন প্রতারক সোহেল রানা ও সহযোগী মনিরুজ্জামান চিটের সাথে। কিন্তু তারা তখনও তাদের অবস্থান থেকে অনড়। পরে ভুক্তভুগিরা বুঝতে পারেন তারা প্রতারনার স্বীকার হয়েছেন। খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ওই প্রতারক চক্র ভুক্তভুগিদের হাতে যে পে-অর্ডার তুলে দিয়েছে তা সোনালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখারই। তবে পে-অর্ডারে দুই জনের স্বাক্ষর থাকার কথা থাকলেও তাতে রয়েছে গড়মিল। শারিরিক প্রতিবন্ধী জমির উদ্দিন নামের এক সিনিয়র কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে ওই পে-অর্ডার গুলোতে। যদিও পদোন্নতি পেয়ে সোনালী ব্যাংক ভেড়ামারা সদ্য বদলী হওয়ায় প্রতিবন্ধী জমির উদ্দিন দাবী করেন তাকে ফাঁসাতে এমন চক্রান্ত করা হয়েছে।
এদিকে প্রতারক চক্রের এমন জালিয়াতির প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা ও দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে ভুক্তভুগি এলাকাবাসী।
পে-অর্ডার প্রতারনার বিষয়ে সোনালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখার ব্যবস্থাপক ওবায়দুর রহমান বলেন, যে পে-অর্ডার গুলো ভুক্তভুগিদের দেয়া হয়েছে তা অসম্পূর্ণ। ওই সব পে-অর্ডারে দুইজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর ও সীল থাকার কথা যা পে-অর্ডারগুলোতে নেই। প্রাপকের ঘরে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামও লেখা নেই। ব্যবস্থাপকের দাবী প্রতারক চক্র যে পে অর্ডারগুলো ব্যবহার করছে তা ব্যাংক কর্তৃক সরবরাহ নয়।
সোনালী ব্যাংক দৌলতপুর শাখার পে-অর্ডার জালিয়াতি নিয়ে সোনালী ব্যাংক কুষ্টিয়া প্রধান শাখা পক্ষ থেকে ২ সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তারা তদন্তের কাজও শুরু করেছেন। ব্যাংকের কেউ এই প্রতারনার সাথে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপ্যাল অফিসার এজিএম এ এইচ এম শফিকুল ইসলাম জানান।
এই ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলে অফিসে দিনভর রুদ্ধদার বৈঠক হলে ভুক্তভুগিরা তাদের টাকা ফেরত পায়নি। প্রতারক সোহেল রানা ও তার সহযোগী মনিরুজ্জামান দু’জনই গা ঢাকা দিয়েছে। অসহায় মানুষগুলো টাকা ফিরে পাবার আশায় পথে পথে ঘুরছে।
.
.