নেত্রকোনা ০৩:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুষ্টিয়ায় ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি দখলে শিল্পপতি, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন একাট্টা, হস্তক্ষেপ আদালতের

  • আপডেট : ০৬:৫৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৯
  • ২৭৫

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া :

কুষ্টিয়ায় জোড় পূর্বক অন্যের জমি দখলে পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় শিল্পপতিদের ধারাবাহিক দখলবাজির বিরুদ্ধে অবশেষে বাধা হলেন আদালত। গত ১০জুন,২০১৯ তারিখে বিকাল ৪টায় সদর উপজেলার কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশর্^স্থ বটতৈল এলাকার রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির মামলিকানা স্বত্ত¡ দখলীয় ও রেকর্ডভুক্ত জমির উপর নির্মিত ২২টি দোকান বিশিষ্ট ‘প্রামানিক মার্কেট’ নামের দ্বি-তল ভবনটি গুড়িয়ে দিয়ে জবর দখলের অভিযোগ ঘটনাস্থলেরই ‘কেএনবি কঘই এগ্রো ইন্ডা: লি:’ নামক একটি পোল্ট্রি, মৎস ও পশুখাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানা মালিক কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

তবে তিনি দাবি করেন জমিটি কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ থেকে ইজারা সূত্রে প্রাপ্ত। এঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রাকিবুল ইসলাম বাদি হয়ে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের দাবি করে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, শিল্পপতি কামরুজ্জামান, জেলা পরিষদের আরও তিন কর্মকর্তার নামোল্লেকসহ ১২-১৫জন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে দ:বি: ১২০(খ)/১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৪০৩/১০৯ ও ৪২৭ ধারায় অভিযোগ এনে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নেয়ায় অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রেজাউল করীম এর আদালতে মামলা করেন। মামলা নং সি আর-৫৯৭/২০১৯। অভিযোগ আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত ঘটনার তদন্তসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারকে।

ইতোপূর্বে এজাতীয় অন্যান্য ঘটনায় কোন ক্ষতিগ্রস্ত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিকার ও ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে আদালত পর্যন্ত আসতে না পারলেও এবারই প্রথম নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এমন যোগসাজসী জবর দখলের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অভিযোগ আমলে নিয়েছেন কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। জেলা পরিষদের দাবি জমিটি তাদের মালিকানাভুক্ত। যদিও নিটকস্থ সংশ্লিষ্ট জগতি ইউনিয়ন ভুমি অফিসের রেকর্ড সুত্রে ভুমি কর্মকর্তা বলছেন, ঘটনাস্থলের জমিটি নিকট ৫০বছরের রেকর্ড মতে ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে রাজস্ব সংগৃহীত হচ্ছে।

হঠাৎ করে জেলা পরিষদের দাবিকৃত তথ্যের কোন সত্যতা তাদের কাছে নেই বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এছাড়াও উল্লেখিত বটতৈল মৌজার খতিয়ান নং আর এস ৯৫৮ দাগ নং ২০২৮এর আংশিক জমির ব্যক্তি মালিকানা স্বত্ত¡াধিকার হিসেবে বিআরবি গ্রæপের অংগ প্রতিষ্ঠান এমআরএস ফিলিং ষ্টেশন বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। অন্যদিকে জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত ইজারাকৃত জমির চৌহদ্দি সনাক্তে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে সরেজমিন পুলিশী তদন্তকালে ঘটনাস্থলের চৌহদ্দি যেভাবে সনাক্ত করা হয়েছে সেখানে তথ্যের ব্যাপক গড়মিল রয়েছে বলে বাদির আইনজীবী মাহাতাব উদ্দিন আদালতের নজরে আনেন।

মামলার বাদি সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের মৃত: আনোয়ার আলীর ছেলে ও (জিএম কারখানা, ঠাকুরগাঁও চিনিকল) রাকিবুল ইসলামের অভিযোগ, ঘটনার দিন প্রকাশ্য দিবালোকে আমার মার্কেট ভেঙ্গে জবর দখলের বিষয়টি জানিয়ে সাহায্যের জন্য কুষ্টিয়া মডেল থানায় একাধিকবার অনুরোধ করলেও পুলিশ সেখানে আসেননি। শিল্পপতি কামরুজ্জামান বহুদিন ধরেই আমার জমিটি তার কাছে বিক্রয় করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। আমি রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে প্রকাশ্যে আমার মার্কেট ভেঙ্গে জমিটি জবর দখল নিয়েছেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসন বরাবরের ন্যায় গতানুগতিক বক্তব্যে বলছেন, কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জবর দখল হয়ে থাকলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ বাস্তবতা হলো- আদালতের নির্দেশে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার উপর ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) একেএম জহিরুল ইসলাম কর্তৃক আদালতে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বাস্তব চিত্র বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও তদন্ত মন্তব্যে অভিযুক্তদের অব্যহতিদানের সুপারিশ কার্যত: দখলবাজির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নগ্ন যোগসাজসের দৃষ্টান্ত যা বে-আইনী ও ন্যায় বিচারের অন্তরায় এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেন বাদির আইনজীবী এবং তা বাতিলের জন্যে গত ৬আগষ্ট আদালতে নারাজি দরখাস্ত দাখিল করেন তিনি। বিজ্ঞ আদালত উভয়পক্ষের শুনানী শেষে অভিযোগটি মামলা হিসেবে আমলে নেন এবং এজাহার নামীয় ১নং আসামী কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সি মো: মনিরুজ্জান ছাড়া বাকি অভিযুক্তদের আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করেছেন যা কার্যত: পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর হিসেবে গন্য করে।

উল্লেখিত ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি দখলে অভিযুক্ত শিল্পপতি কামরুজ্জামন গণমাধ্যমে প্রশ্নের জবাবে মার্কেট ভেঙ্গে জবর দখলের সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে সমস্ত দায় চাপান জেলা পরিষদের উপর। তিনি বলেন, ইজারাকৃত জমির উপর থেকে মার্কেট অপসারনের কাজ করেছেন জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা।

এবিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মুন্সি মো: মনিরুজ্জামান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মার্কেট ভেঙ্গে জমি জবর দখলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় বলে দাবি জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল আজমের। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ কর্তৃক কোন উচ্ছেদের প্রয়োজন হলে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে তা বাস্তবায়ন করা হয়। তড়িঘরি করে ইজারা প্রাপ্ত শিল্পপতি কামরুজ্জামান নিজেই তার লোকজন নিয়ে বুলডোজার ও এ্যাস্কেভেটর দিয়ে মার্কেটটি ভেঙ্গে অপসারন করেছেন। এধরণের কাজের সাথে জেলা পরিষদ জড়িত নয়।

ঘটনাটি তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অপরাধ) একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, যে কোন ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ হচ্ছে ফার্স্ট জাজ, যিনি ঘটনার সত্যতা নিরুপনসহ প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া। একটি ভালো তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিজ্ঞ আদালতও ভালো বিচার করতে পারেন না। এসময় জেলা পরিষদ-কেএনবি বনাম রাকিবুল ইসলামের জমি দখল বিষয়ক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই তদন্ত প্রতিবেদনটি যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরন করেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এবিষয়ে কোন মন্তব্যে করতে চাই না। মামলার কোন পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি নারাজি আবেদন দিতে পারেন, সেক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালত তা আমলে নিয়ে বিচারিক সিদ্ধান্ত নেবেন। তদন্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাত দুষ্টের অভিযোগ সঠিক নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমার বর্তমান ঠিকানা স্টেশন রোড, পূর্বধলা, নেত্রকোনা। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমার ধর্ম ইসলাম। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। আমাদের প্রকাশনা “পূর্বকন্ঠ” স্বাধীনতার চেতনায় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় অনলাইন । পাঠক আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা। পূর্বকণ্ঠ কথা বলে বাঙালির আত্মপ্রত্যয়ী আহ্বান ও ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার। কথা বলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে। ছড়িয়ে দিতে এ চেতনা দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে। আমরা রাষ্ট্রের আইন কানুন, রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী এবং বাঙ্গালীর আবহমান কালের সামাজিক সহনশীলতার বিপক্ষে পূর্বকন্ঠ কখনো সংবাদ প্রকাশ করে না। আমরা সকল ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন ধর্মমত বা তাদের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আমরা কিছু প্রকাশ করি না। আমাদের সকল প্রচেষ্টা পাঠকের সংবাদ চাহিদাকে কেন্দ্র করে। তাই পাঠকের যে কোনো মতামত আমরা সাদরে গ্রহন করব।

দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

কুষ্টিয়ায় ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি দখলে শিল্পপতি, পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন একাট্টা, হস্তক্ষেপ আদালতের

আপডেট : ০৬:৫৯:০৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৯

নজরুল ইসলাম মুকুল, কুষ্টিয়া :

কুষ্টিয়ায় জোড় পূর্বক অন্যের জমি দখলে পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় শিল্পপতিদের ধারাবাহিক দখলবাজির বিরুদ্ধে অবশেষে বাধা হলেন আদালত। গত ১০জুন,২০১৯ তারিখে বিকাল ৪টায় সদর উপজেলার কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পশ্চিম পাশর্^স্থ বটতৈল এলাকার রাকিবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির মামলিকানা স্বত্ত¡ দখলীয় ও রেকর্ডভুক্ত জমির উপর নির্মিত ২২টি দোকান বিশিষ্ট ‘প্রামানিক মার্কেট’ নামের দ্বি-তল ভবনটি গুড়িয়ে দিয়ে জবর দখলের অভিযোগ ঘটনাস্থলেরই ‘কেএনবি কঘই এগ্রো ইন্ডা: লি:’ নামক একটি পোল্ট্রি, মৎস ও পশুখাদ্য প্রস্তুতকারী কারখানা মালিক কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

তবে তিনি দাবি করেন জমিটি কুষ্টিয়া জেলা পরিষদ থেকে ইজারা সূত্রে প্রাপ্ত। এঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রাকিবুল ইসলাম বাদি হয়ে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিসাধনের দাবি করে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, শিল্পপতি কামরুজ্জামান, জেলা পরিষদের আরও তিন কর্মকর্তার নামোল্লেকসহ ১২-১৫জন অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে দ:বি: ১২০(খ)/১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৪০৩/১০৯ ও ৪২৭ ধারায় অভিযোগ এনে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নেয়ায় অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রেজাউল করীম এর আদালতে মামলা করেন। মামলা নং সি আর-৫৯৭/২০১৯। অভিযোগ আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত ঘটনার তদন্তসহ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন কুষ্টিয়া পুলিশ সুপারকে।

ইতোপূর্বে এজাতীয় অন্যান্য ঘটনায় কোন ক্ষতিগ্রস্ত সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি প্রতিকার ও ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে আদালত পর্যন্ত আসতে না পারলেও এবারই প্রথম নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এমন যোগসাজসী জবর দখলের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অভিযোগ আমলে নিয়েছেন কুষ্টিয়া অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। জেলা পরিষদের দাবি জমিটি তাদের মালিকানাভুক্ত। যদিও নিটকস্থ সংশ্লিষ্ট জগতি ইউনিয়ন ভুমি অফিসের রেকর্ড সুত্রে ভুমি কর্মকর্তা বলছেন, ঘটনাস্থলের জমিটি নিকট ৫০বছরের রেকর্ড মতে ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে রাজস্ব সংগৃহীত হচ্ছে।

হঠাৎ করে জেলা পরিষদের দাবিকৃত তথ্যের কোন সত্যতা তাদের কাছে নেই বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এছাড়াও উল্লেখিত বটতৈল মৌজার খতিয়ান নং আর এস ৯৫৮ দাগ নং ২০২৮এর আংশিক জমির ব্যক্তি মালিকানা স্বত্ত¡াধিকার হিসেবে বিআরবি গ্রæপের অংগ প্রতিষ্ঠান এমআরএস ফিলিং ষ্টেশন বহাল তবিয়তে বিদ্যমান। অন্যদিকে জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত ইজারাকৃত জমির চৌহদ্দি সনাক্তে যা উল্লেখ করা হয়েছে তার সাথে সরেজমিন পুলিশী তদন্তকালে ঘটনাস্থলের চৌহদ্দি যেভাবে সনাক্ত করা হয়েছে সেখানে তথ্যের ব্যাপক গড়মিল রয়েছে বলে বাদির আইনজীবী মাহাতাব উদ্দিন আদালতের নজরে আনেন।

মামলার বাদি সদর উপজেলার হরিশংকরপুর গ্রামের মৃত: আনোয়ার আলীর ছেলে ও (জিএম কারখানা, ঠাকুরগাঁও চিনিকল) রাকিবুল ইসলামের অভিযোগ, ঘটনার দিন প্রকাশ্য দিবালোকে আমার মার্কেট ভেঙ্গে জবর দখলের বিষয়টি জানিয়ে সাহায্যের জন্য কুষ্টিয়া মডেল থানায় একাধিকবার অনুরোধ করলেও পুলিশ সেখানে আসেননি। শিল্পপতি কামরুজ্জামান বহুদিন ধরেই আমার জমিটি তার কাছে বিক্রয় করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। আমি রাজি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও জেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে প্রকাশ্যে আমার মার্কেট ভেঙ্গে জমিটি জবর দখল নিয়েছেন।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসন বরাবরের ন্যায় গতানুগতিক বক্তব্যে বলছেন, কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে জবর দখল হয়ে থাকলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ বাস্তবতা হলো- আদালতের নির্দেশে জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার উপর ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব হিসেবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) একেএম জহিরুল ইসলাম কর্তৃক আদালতে দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনার বাস্তব চিত্র বিদ্যমান থাকা সত্তে¡ও তদন্ত মন্তব্যে অভিযুক্তদের অব্যহতিদানের সুপারিশ কার্যত: দখলবাজির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নগ্ন যোগসাজসের দৃষ্টান্ত যা বে-আইনী ও ন্যায় বিচারের অন্তরায় এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিযোগ করেন বাদির আইনজীবী এবং তা বাতিলের জন্যে গত ৬আগষ্ট আদালতে নারাজি দরখাস্ত দাখিল করেন তিনি। বিজ্ঞ আদালত উভয়পক্ষের শুনানী শেষে অভিযোগটি মামলা হিসেবে আমলে নেন এবং এজাহার নামীয় ১নং আসামী কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুন্সি মো: মনিরুজ্জান ছাড়া বাকি অভিযুক্তদের আদালতে হাজির হওয়ার সমন জারি করেছেন যা কার্যত: পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর হিসেবে গন্য করে।

উল্লেখিত ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি দখলে অভিযুক্ত শিল্পপতি কামরুজ্জামন গণমাধ্যমে প্রশ্নের জবাবে মার্কেট ভেঙ্গে জবর দখলের সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে সমস্ত দায় চাপান জেলা পরিষদের উপর। তিনি বলেন, ইজারাকৃত জমির উপর থেকে মার্কেট অপসারনের কাজ করেছেন জেলা পরিষদের কর্মকর্তারা।

এবিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মুন্সি মো: মনিরুজ্জামান কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে মার্কেট ভেঙ্গে জমি জবর দখলের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় বলে দাবি জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল আজমের। তিনি বলেন, জেলা পরিষদ কর্তৃক কোন উচ্ছেদের প্রয়োজন হলে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়ায় ম্যাজিস্ট্রেট ও আইন শৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতিতে তা বাস্তবায়ন করা হয়। তড়িঘরি করে ইজারা প্রাপ্ত শিল্পপতি কামরুজ্জামান নিজেই তার লোকজন নিয়ে বুলডোজার ও এ্যাস্কেভেটর দিয়ে মার্কেটটি ভেঙ্গে অপসারন করেছেন। এধরণের কাজের সাথে জেলা পরিষদ জড়িত নয়।

ঘটনাটি তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(প্রশাসন ও অপরাধ) একেএম জহিরুল ইসলাম বলেন, যে কোন ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ হচ্ছে ফার্স্ট জাজ, যিনি ঘটনার সত্যতা নিরুপনসহ প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয়া। একটি ভালো তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিজ্ঞ আদালতও ভালো বিচার করতে পারেন না। এসময় জেলা পরিষদ-কেএনবি বনাম রাকিবুল ইসলামের জমি দখল বিষয়ক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই তদন্ত প্রতিবেদনটি যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া অনুসরন করেই সম্পন্ন করা হয়েছে। এবিষয়ে কোন মন্তব্যে করতে চাই না। মামলার কোন পক্ষ সংক্ষুব্ধ হলে তিনি নারাজি আবেদন দিতে পারেন, সেক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালত তা আমলে নিয়ে বিচারিক সিদ্ধান্ত নেবেন। তদন্ত প্রতিবেদনে পক্ষপাত দুষ্টের অভিযোগ সঠিক নয়।