নেত্রকোনা ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কাঁচা রাস্তা নিয়ে ভোগান্তিতে১২ খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দারা

  • আপডেট : ০৯:০৫:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৩৯
মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল,প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার পাহাড় ও চা-বাগানের ভেতরে উঁচু–নিচু টিলা। তার বুক চিরে এঁকেবেঁকে চলা সড়ক দিয়ে যেতে হয় খাসিয়া পুঞ্জিগুলোতে। বেশির ভাগ এলাকায় নেই পাকা রাস্তা। শিক্ষা, চিকিৎসা, পণ্য বাজারজাতসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের খাসিয়ারা।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের তথ্যমতে, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১২টি খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। এই পুঞ্জিগুলোতে প্রায় ৭০০ খাসিয়া পরিবার বসবাস করে।
পুঞ্জিগুলো হচ্ছে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, বালিশিরা খাসিয়া পুঞ্জি, নিরালা পুঞ্জি, চলিতা ছড়া পুঞ্জি, ১ নম্বর নাহার পুঞ্জি, ২ নম্বর নাহার পুঞ্জি, লাংলিয়া ছড়া, ধনছড়া, জুলেখা পুঞ্জি, ৬ নম্বর হোসনাবাদ পুঞ্জি, ১১ নম্বর হোসনাবাদ পুঞ্জি, ১২ নম্বর হোসনাবাদ পুঞ্জি।
লাউয়াছড়া ও বালিশিরা পুঞ্জির যোগাযোগব্যবস্থা কিছুটা ভালো। অন্যগুলোতে যাতায়াতের রাস্তাঘাটের অত্যন্ত নাজুক অবস্থা। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এই সদস্যদের যাতায়াতের জন্য পাকা সড়ক করলেই সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করেন তাঁরা।
উপজেলার লাংলিয়া ছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী (গ্রামপ্রধান) কিরি লাংথং বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে আমাদের পুঞ্জি। এর মধ্যে প্রায় সাত কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। বৃষ্টির সময় এই রাস্তাগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। জিপগাড়িগুলো মাঝেমধ্যে উল্টে যায়।
অনেক সময় দেখা যায়, রাস্তা খারাপ থাকার কারণে পুঞ্জিতে উৎপাদিত পান, আনারসসহ বিভিন্ন পণ্য শহরে পৌঁছে দেওয়া যায় না।’ নিরালা পুঞ্জি থেকে শ্রীমঙ্গল শহরের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে দুই কিলোটির খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
রাস্তার আলুবাড়ি এলাকার বেশ কিছু অংশ খাড়া টিলা। বর্ষাকালে এই টিলা বেয়ে গাড়ি উঠতে খুব কষ্ট হয়। অনেক ঝুঁকি নিয়ে চালকেরা গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান। ওই জায়গায় রাস্তা পাকা করে দেওয়ার দাবি পুঞ্জির বাসিন্দাদের।
নিরালা পুঞ্জির মন্ত্রী (গ্রামপ্রধান) তাহেরা পতাম বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় অসুস্থ রোগী নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে বিপাকে পড়ে লোকজন। রাস্তার কথা চিন্তা করে তাঁদের সন্তান প্রসবের অন্তত ১০ দিন আগে শহরে রেখে আসতে হয়।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদক সাজু মারছিয়াং  বলেন, উপজেলার ১২টি খাসিয়া পুঞ্জির মধ্যে ২টি ছাড়া বাকি ১০টির যাতায়াতব্যবস্থা খুবই খারাপ। শীতে কষ্ট করে চলাফেরা করতে পারলেও বর্ষার সময় রাস্তাঘাটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
রাস্তার কারণে জরুরি কাজে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। অবিলম্বে পুঞ্জিগুলোতে যাতায়াতের রাস্তাগুলো পাকা করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। পুঞ্জির বাসিন্দা ও নেতাদের ভাষ্য, খাসিয়া পুঞ্জিগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। তবে আশপাশে উচ্চবিদ্যালয় নেই। রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। এ কারণে উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে যায়। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরাই কেবল ছেলেমেয়েদের শহরের হোস্টেলে রেখে পড়াশোনা করান।
তা ছাড়া পুঞ্জিতে পান, লেবু, আনারসসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হয়। কিন্তু রাস্তার কারণে বাজারজাত করতে খরচ অনেক বেশি লাগে। পুঞ্জির রাস্তাগুলো পাকা করা হলে বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার কষ্ট অনেকাংশেই কমে যাবে।
এটুআই প্রকল্পের শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমন্বয়কারী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য পাঁচটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আরও তিনটি সেতুর কাজ প্রক্রিয়াধীন। এলাকার রাস্তাগুলো পাকা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। এগুলো দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে।
ইউএনও নজরুল ইসলাম বলেন, পুঞ্জিগুলোতে যাওয়ার কাঁচা রাস্তাগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কাজ করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। সম্পাদনা : সুমন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রকাশক ও সম্পাদক সম্পর্কে-

আমি মো. শফিকুল আলম শাহীন। আমি একজন ওয়েব ডেভেলপার ও সাংবাদিক । আমি পূর্বকণ্ঠ অনলাইন প্রকাশনার সম্পাদক ও প্রকাশক। আমি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক। আমি করতে, দেখতে এবং অভিজ্ঞতা করতে পছন্দ করি এমন অনেক কিছু আছে। আমি আইটি সেক্টর নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করি। যেমন ওয়েব পেজ তৈরি করা, বিভিন্ন অ্যাপ তৈরি করা, অনলাইন রেডিও স্টেশন তৈরি করা, অনলাইন সংবাদপত্র তৈরি করা ইত্যাদি। আমাদের প্রকাশনা “পূর্বকন্ঠ” স্বাধীনতার চেতনায় একটি নিরপেক্ষ জাতীয় অনলাইন । পাঠক আমাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরনা। পূর্বকণ্ঠ কথা বলে বাঙালির আত্মপ্রত্যয়ী আহ্বান ও ত্যাগে অর্জিত স্বাধীনতার। কথা বলে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে। ছড়িয়ে দিতে এ চেতনা দেশের প্রত্যেক কোণে কোণে। আমরা রাষ্ট্রের আইন কানুন, রীতিনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রীয় আইন বিরোধী এবং বাঙ্গালীর আবহমান কালের সামাজিক সহনশীলতার বিপক্ষে পূর্বকন্ঠ কখনো সংবাদ প্রকাশ করে না। আমরা সকল ধর্মমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কোন ধর্মমত বা তাদের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে আমরা কিছু প্রকাশ করি না। আমাদের সকল প্রচেষ্টা পাঠকের সংবাদ চাহিদাকে কেন্দ্র করে। তাই পাঠকের যে কোনো মতামত আমরা সাদরে গ্রহন করব।
জনপ্রিয়

পূর্বধলায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিনের দাফন সম্পন্ন

কাঁচা রাস্তা নিয়ে ভোগান্তিতে১২ খাসিয়া পুঞ্জির বাসিন্দারা

আপডেট : ০৯:০৫:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল,প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজার পাহাড় ও চা-বাগানের ভেতরে উঁচু–নিচু টিলা। তার বুক চিরে এঁকেবেঁকে চলা সড়ক দিয়ে যেতে হয় খাসিয়া পুঞ্জিগুলোতে। বেশির ভাগ এলাকায় নেই পাকা রাস্তা। শিক্ষা, চিকিৎসা, পণ্য বাজারজাতসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের খাসিয়ারা।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের তথ্যমতে, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১২টি খাসিয়া পুঞ্জি রয়েছে। এই পুঞ্জিগুলোতে প্রায় ৭০০ খাসিয়া পরিবার বসবাস করে।
পুঞ্জিগুলো হচ্ছে লাউয়াছড়া খাসিয়া পুঞ্জি, বালিশিরা খাসিয়া পুঞ্জি, নিরালা পুঞ্জি, চলিতা ছড়া পুঞ্জি, ১ নম্বর নাহার পুঞ্জি, ২ নম্বর নাহার পুঞ্জি, লাংলিয়া ছড়া, ধনছড়া, জুলেখা পুঞ্জি, ৬ নম্বর হোসনাবাদ পুঞ্জি, ১১ নম্বর হোসনাবাদ পুঞ্জি, ১২ নম্বর হোসনাবাদ পুঞ্জি।
লাউয়াছড়া ও বালিশিরা পুঞ্জির যোগাযোগব্যবস্থা কিছুটা ভালো। অন্যগুলোতে যাতায়াতের রাস্তাঘাটের অত্যন্ত নাজুক অবস্থা। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এই সদস্যদের যাতায়াতের জন্য পাকা সড়ক করলেই সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে বলে মনে করেন তাঁরা।
উপজেলার লাংলিয়া ছড়া পুঞ্জির মন্ত্রী (গ্রামপ্রধান) কিরি লাংথং বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে আমাদের পুঞ্জি। এর মধ্যে প্রায় সাত কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। বৃষ্টির সময় এই রাস্তাগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। জিপগাড়িগুলো মাঝেমধ্যে উল্টে যায়।
অনেক সময় দেখা যায়, রাস্তা খারাপ থাকার কারণে পুঞ্জিতে উৎপাদিত পান, আনারসসহ বিভিন্ন পণ্য শহরে পৌঁছে দেওয়া যায় না।’ নিরালা পুঞ্জি থেকে শ্রীমঙ্গল শহরের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে দুই কিলোটির খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
রাস্তার আলুবাড়ি এলাকার বেশ কিছু অংশ খাড়া টিলা। বর্ষাকালে এই টিলা বেয়ে গাড়ি উঠতে খুব কষ্ট হয়। অনেক ঝুঁকি নিয়ে চালকেরা গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান। ওই জায়গায় রাস্তা পাকা করে দেওয়ার দাবি পুঞ্জির বাসিন্দাদের।
নিরালা পুঞ্জির মন্ত্রী (গ্রামপ্রধান) তাহেরা পতাম বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় অসুস্থ রোগী নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের নিয়ে বিপাকে পড়ে লোকজন। রাস্তার কথা চিন্তা করে তাঁদের সন্তান প্রসবের অন্তত ১০ দিন আগে শহরে রেখে আসতে হয়।
খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের প্রচার সম্পাদক সাজু মারছিয়াং  বলেন, উপজেলার ১২টি খাসিয়া পুঞ্জির মধ্যে ২টি ছাড়া বাকি ১০টির যাতায়াতব্যবস্থা খুবই খারাপ। শীতে কষ্ট করে চলাফেরা করতে পারলেও বর্ষার সময় রাস্তাঘাটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।
রাস্তার কারণে জরুরি কাজে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় না। অবিলম্বে পুঞ্জিগুলোতে যাতায়াতের রাস্তাগুলো পাকা করে দেওয়ার দাবি জানান তিনি। পুঞ্জির বাসিন্দা ও নেতাদের ভাষ্য, খাসিয়া পুঞ্জিগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। তবে আশপাশে উচ্চবিদ্যালয় নেই। রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারে না। এ কারণে উচ্চশিক্ষার পথ বন্ধ হয়ে যায়। যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরাই কেবল ছেলেমেয়েদের শহরের হোস্টেলে রেখে পড়াশোনা করান।
তা ছাড়া পুঞ্জিতে পান, লেবু, আনারসসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদিত হয়। কিন্তু রাস্তার কারণে বাজারজাত করতে খরচ অনেক বেশি লাগে। পুঞ্জির রাস্তাগুলো পাকা করা হলে বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার কষ্ট অনেকাংশেই কমে যাবে।
এটুআই প্রকল্পের শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমন্বয়কারী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ প্রকল্পের অধীনে ইতিমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য পাঁচটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আরও তিনটি সেতুর কাজ প্রক্রিয়াধীন। এলাকার রাস্তাগুলো পাকা করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। এগুলো দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে।
ইউএনও নজরুল ইসলাম বলেন, পুঞ্জিগুলোতে যাওয়ার কাঁচা রাস্তাগুলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে কাজ করে দেওয়ার জন্য চেষ্টা চলছে। সম্পাদনা : সুমন